গোপালগঞ্জ জেলাধীন কোটালিপাড়া উপজেলার দক্ষিনপাড় গ্রামের অমল হালদারের মেয়ে ধারাবাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী দোলা হালদার (১৬), গত বুধবার স্কুলে কোচিং চলাকালীন সময় শিক্ষককে না জানিয়ে টিফিনে যাওয়ার অপরাধে, দীর্ঘদিন সাময়িক বরখাস্ত থাকার পর সদ্য যোগদান করা শিক্ষক গোবিন্দ মৃধা শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট করে।
মারপিটে ঐ শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সহপাঠি ও অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে ধারাবাশাইল বাজারে গ্রাম্য দীলিপ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। ডাক্তার ঐ শিক্ষার্থীকে স্যালাইন ও উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ্য করে।
আহত শিক্ষার্থী দোলা হালদার সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, স্যার আমাকে দুইদিন আগে অনৈতিক প্রস্তাব দেন, আমি স্যারকে বলি, আপনি আমার শিক্ষাগুরু, বাবার মতো। উত্তরে স্যার রাগান্বিত হয়ে বলেন, রাজী না হয়ে কাজটা ভাল করলে না, আমি তোমাকে দেখে নেব।
ঘটনার দিন আমি এবং আমার সহপাঠী স্যারদের না জানিয়ে টিফিনে যাই, ফিরে এসে দেখি আমাদের ব্যাগ লাইব্রেরিতে রাখা হয়েছে, আমরা ব্যাগ আনতে গেলে গোবিন্দ মৃধা স্যার বলেন, তোমাদের অভিভাবকদের নিয়ে আসো। উত্তরে আমি বলি, আমার মা বাবা এখানে থাকেনা, আমি মামা বাড়িতে থাকি, স্যারের কাছে ক্ষমা চাই এবং বলি, আর কোনো দিন না বলে যাবো না, কিন্তু গোবিন্দ স্যার আমার কথা না শুনে আমার গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে দু’হাত পিছনে বেধে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয় এবং মারতে থাকে, তখন আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার যখন জ্ঞান ফেরে তখন দেখি স্থানীয় ধারাবাশাইল বাজারস্থ দিলীপ ডাক্তারের চেম্বারে আমার হাতে স্যালাইন লাগানো।
ধারাবাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার মল্লিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময়ে আমি বিদ্যালয়ে ছিলাম না, জরুরী কাজে বাইরে ছিলাম, এসে শুনি ধর্মীয় শিক্ষক বিউটি রানী এবং ছাত্রীদের সহযোগিতায় মেয়েটিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়, পরে আরো জানতে পারি, সহকারী শিক্ষক গোবিন্দ বাবু তাকে বেত দিয়ে পিটিয়েছেন, এতে সে অজ্ঞান হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী ও ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকবৃন্দ সাংবাদিকদের জানান- প্রথম স্ত্রীর মামলার কারনে কয়েক বছর সাসপেন্ড হয়েছিল ঐ দুশ্চরিত্রের লম্পট শিক্ষক হরগোবিন্দ মৃধা, সে মাঝে মধ্যেই ছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়ার কথা বলে কুপ্রস্তাব দেয়, তার প্রস্তাবে রাজি না হলেই বিভিন্ন অজুহাতে মারপিট করে। পূর্বেও সে এরকম একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঐ শিক্ষক নামের লম্পটের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক হরগোবিন্দ মৃধা সাংবাদিকদের কাছে মারপিটের ঘটনা স্বীকার করেন। তার কাছে আরো জানতে চাওয়া হয়, সরকারি ভাবে স্কুলের বেত ব্যবহার করার নিষেধ এবং শিক্ষকেরা প্রয়োজনে ছাত্র ছাত্রীদের মেরেও থাকেন, কিন্তু দোলাকে মারার পর আপনার বিরূদ্ধে এই অনৈতিক অভিযোগ উঠলো কেন? তিনি বলেন, এগুলো সব ষড়যন্ত্র, এক পর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে লাইব্রেরি থেকে বাহিরে চলে যান।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন- আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি, অভিযোগ পেলেই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, একই গ্রামে ইন্দ্র মন্ডলের মেয়ে দীপু মন্ডলকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল শিক্ষক হরগোবিন্দ মৃধা। বিয়ের পর যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নানা ভাবে শারীরিক নির্যাতন ও মারপিট করে। এ ব্যাপারে দীপু মন্ডল একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং- জিআর-১৯২/১৪, তাং- ০৩/১০/২০১৪ইং। এস,আই জহুরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। উক্ত মামলায় ২মাস করাবাস করেন এই যৌতুক লোভী শিক্ষক হরগোবিন্দ মৃধা।