রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন এক স্নায়ু যুদ্ধের শুরু?

Slider সারাবিশ্ব

306888_185

 

 

 

 

পঞ্চাশের দশক থেকে ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিক পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পাশ্চাত্য বিশ্বের শত্রুতাকে বলা হতো ‘শীতল যুদ্ধ’ বা ‘স্নায়ুযুদ্ধ’। এখন আবারো নতুন এক শীতল যুদ্ধের সূচনার কথা উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু এই তুলনা কি যথার্থ?

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা উইলসন সেন্টারের গবেষক মাইকেল কফম্যান বলেন,- শীতল যুদ্ধ ছিল বিশ্বের দুই পৃথক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে রেষারেষি, প্রতিযোগিতা। সে সময় দুই পরাশক্তি তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির বলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলো।

“বিশ্বজুড়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের কারণে ঐ প্রতিযোগিতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিলো তখন। আরেকটি কারণ ছিল সামরিক শক্তির ভারসাম্য”।

সেই তুলনায়, কফম্যান বলছেন, এখনকার বিরোধের পেছনে সামরিক সেই ভারসাম্য নেই অথবা আদর্শের কোনো লড়াই নেই। “এখনকার বিরোধের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে কিছু নেতার কিছু সিদ্ধান্ত, কৌশল এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে মতবিরোধ”।

সুতরাং, কফম্যান মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে বেশ কিছু আঘাত আসবে, কিন্তু তার মাত্রা কখনই শীতল যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো দাঁড়াবে না। “তাছাড়া রাশিয়ার সেই ক্ষমতা এখন নেই যে তারা শক্তির ভারসাম্যে মৌলিক পরিবর্তন ঘটাতে পারবে অথবা বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারবে”।

শীতল যুদ্ধের সময় ইউরোপে কোনো সামরিক সংঘাত হয়নি। কিন্তু অ্যাঙ্গোলা বা কিউবা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের আরো নানা জায়গায় সংঘাত চলেছে।

কিন্তু এখনকার সংঘাতের জায়গা প্রধানত রাশিয়ার সীমান্তে – জর্জিয়া, ইউক্রেন।

এছাড়া শক্তির ভারসাম্যও এখন অনেকটাই আলাদা। রাশিয়ার হাতে এখন আর তেমন কোনো ‘সফট পাওয়ার’ নেই যেটা দিয়ে আদর্শিকভাবে তারা বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারে।

শীতল যুদ্ধ প্রধানত ছিল কমিউনিজম ও ক্যাপিটালিজমের যুদ্ধ। এখন তাহলে রাশিয়া ও আমেরিকার প্রতিযোগিতা কী নিয়ে?

কফম্যান বলছেন, “রাশিয়ার এখন চিন্তা হচ্ছে কীভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি শক্তিধর দেশ হিসাবে টিকে থাকা যায়, এবং এখনো অবশিষ্ট যে জায়গাগুলোতে তাদের প্রভাব রয়েছে, সেটিকে ধরে রাখা যায়”।

অন্যদিকে আমেরিকার সমস্যা – তাদের প্রভাব এতটাই প্রসারিত হয়েছে যে তা সামাল দেওয়া অনেকসময় কষ্ট হয়ে পড়েছে। “গত দুই দশক ধরে কোনো চ্যালেঞ্জ না থাকায় আমেরিকা তার সুযোগ নিয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তারের একটা স্বাভাবিক পরিণতি রয়েছে”।

দিন দিন পরিষ্কার হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী উদার অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে একদিনেও চীন বা রাশিয়া মেনে নেয়নি এবং তাদের ওপর সেটা চাপিয়ে দেয়ার ক্ষমতাও এখন পশ্চিমা বিশ্বের নেই।

ফলে রাজনীতিতে ক্ষমতার রেষারেষি ফিরে আসছে।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য পশ্চিমা বিশ্বেরও কিছুটা দায় রয়েছে, এবং নতুন এক শীতল যুদ্ধের যে ধারণা পশ্চিমাদের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাভাল ওয়ার কলেজের গবেষক লাইল গোল্ডস্টোইন বলছেন, শীতল যুদ্ধের পর অনেক পশ্চিমা দেশ যেন শত্রুর অভাব বোধ করতে শুরু করেছে। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা যেন সহজবোধ্য হুমকির অপেক্ষায় অস্থির হয়ে পড়েছেন”।

গোল্ডস্টেইন বলেন – পশ্চিমারা ইউক্রেন এবং জর্জিয়ার ঘটনায় শীতল যুদ্ধের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা অনেক জটিল। “এই দুই দেশের পরিস্থিতির সাথে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়ার এবং জাতীয়তা এবং সীমান্তের অনেক যোগাযোগ রয়েছে”।

কফম্যান বলেন, “রাশিয়া এখন দুর্বল একটি শক্তি”।

“ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমের তুলনায় তারা প্রযুক্তি এবং আধুনিক পরিশীলিত রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে পিছিয়ে, কিন্তু অর্থনৈতিক শক্তি তাদের দিন দিন বাড়ছে… রাশিয়ার শক্তি এখন আর কমছে না, উল্টোটা বরঞ্চ সত্যি”।

কফম্যান মনে করেন, “সামরিক খাতে সংস্কার ও আধুনিকায়নের পথে গেলে এবং অভ্যন্তরীণ ঝামেলা মেটাতে পারলে, নিজের প্রভাব বলয় অক্ষত রাখার ক্ষমতা রাশিয়া অর্জন করতে পারবে। এবং অনেক সময় দূরে গিয়েও শত্রুকে শিক্ষা দিতে হয়তো পারবে”।

গোল্ডস্টেইন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জোটের শক্তি এক করলে তুলনায় রাশিয়ার শক্তি অনেক কম।

“কিন্তু রাশিয়া গত ১৫ বছরে খুব চিন্তা করে সামরিক খাতে বিনিয়োগ করেছে। তাদের ইস্কান্দার পারমাণবিক অস্ত্র-সম্ভার ন্যাটো কম্যান্ডারদের ভাবিয়ে তুলছে। ইলেকট্রনিক যুদ্ধে ও কামান বা ট্যাংকের শক্তিতেও রাশিয়া খুবই পারদর্শিতা অর্জন করেছে”।

গোল্ডস্টেইনের মতে পশ্চিমা বিশ্বের অন্য সমস্যাটি হলো – রাশিয়াকে প্রভাবিত করতে উপযুক্ত কৌশল নিতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। “পশ্চিমারা বুঝতে পারছে না তারা রাশিয়ার কাছ থেকে ঠিক কী চায়”?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *