.
হাফিজুল ইসলাম লস্কর :: প্রেম শাশ্বত, প্রেম অমর, প্রেম মানেনা জাত কুল মান, প্রেম মানেনা কোন বাধা, মানেনা কোন অভিধান। সেরকমই এক প্রেমের উপমা পুরবী রাণী বিশ্বাস (২০) ও ইমাম উদ্দিন (২৫)।
এক ধরণের অন্ধত্বের মোহে ক্ষণিকের পরিচয়ই হার মানায় চির চেনা মুখ গুলোর। পিতা মাতার ঔরসে লালিত হয়ে ক্ষণিকের পরিচয়ে সব কিছু ম্লান করে একে অপরের পাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে। শেষ পর্যন্ত কেউ ঘর ছাড়ে আর কেউ দেয় আত্মহুতি। এসকল ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। তেমনি একটি ঘটনা ঘটে গেল সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বরের গোটার গাঁওয়ে।
দুটি ভিন্ন ধর্মের হয়েও ভালবেসেছেন একে অন্যকে, ধর্মের বাধন ছিন্ন করে পুরবী রাণী বিশ্বাস আপন করে নিয়েছেন প্রিয়জন ইমাম উদ্দিনকে। ভাদেশ্বর ইউপির শেখপুর গোটার গাঁওয়ে বলিন্দ বিশ্বাস ও প্রেমদা বালা বিশ্বাসের ছোট মেয়ে পূরবী বিশ্বাস (২০) স্থানীয় মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা তার। একই গ্রামের জমশেদ আলী ও কদরজান বিবির ছোট ছেলে ইমাম উদ্দিন (২৫) পেশায় একজন সিএনজি (অটোরিক্সা) চালক।
পাঁচ বছর আগে কোন এক পুজায় পুরবী রাণী বিশ্বাস (২০) ও ইমাম উদ্দিন (২৫) দেখা। সেই প্রথম দেখাতেই তাদের প্রেম। একজন আরেকজনকে মনেপ্রাণে ভালবাসে। অতচ দুজন দুইধর্মে বিশ্বাসী। পুরবী হিন্দু আর ইমাম মুসলিম।
তাদের প্রেম এতই গভীর ছিল যে, দীর্ঘ পাঁচবছর নিভৃতে প্রেম করলেও গত ২৬মার্চ মঙ্গলবার রাত ২টার সময় পুরবী তার নিজ পিত্রালয় থেকে একান্ত আপনজনদের গভীরঘুমে রেখে একাই বেরিয়ে পড়ে প্রিয়জন ইমাম উদ্দীনের কাছে যাবে বলে। এদিকে ইমামও প্রস্তুত পুরবীকে প্রাণপণে নিজের করে সারা জীবনের জন্য পেতে।
প্রথমত ইমামের বাড়ির কেউ তাকে গ্রহণ করতে চাননি। বার বার তাকে নিজ পিত্রালয়ে ফিরে যেতে বললে সে আত্মহুতির হুমকি দেয়। তখন ইমামের বাড়ির লোকজন পূরবীর পরিবারে খবর পাঠায়। কিন্তু পূরবীর পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে কেউ না যাওয়াতে ইমামের পরিবারের লোকজন মুসলিম রীতিতে কালেমা পড়িয়ে পূরবীকে মুসলমান করে নাম রাখেন ফাতেমা জান্নাত। এবং পরে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ফাতেমা জান্নাত (পুরবী রাণী বিশ্বাস) ও ইমাম উদ্দিন’র বিয়ে পড়ানো হয়।
ইমামের মা কদরজান বিবি জানান, আমরা সকাল পর্যন্ত পুরবীকে অনেক করে বুঝিয়েছি তার পিত্রালয়ে ফিরে যেতে। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা, বাবার ঘরে আর ফিরে যাবে না সে। ফিরে গেলে নাকি তার বাড়ির লোকেরা তাকে মারধর করবে, কেটে ফেলবে। তাছাড়া সে নিজেও আত্মহত্যার করবে বলে জানায়। পরে তারা স্থানীয় এক বাড়িতে গিয়ে তাকে কালিমা পড়িয়ে মুসলমান বানিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে তাদের বিবাহ কার্য় সম্পন্ন হয়।
পুরবীর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোন কথা বলতে রাজি হয়নি কেউ। তবে তার বড় এক বোন জানায়, গত ২৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত ২টার সময় সে পালিয়ে যায়। আমরা তার কোন খোজ করিনি। সে যখন চলে গেছে আমাদের ছেড়ে।
ফাতিমা(পুরবী) জানায়, ইমামকে আমি মনেপ্রাণে ভালবাসি। সেও আমাকে ভালবাসে। সে মুসলিম হলেও তার ধর্মের প্রতি, তার ধর্মের নামায রোজার প্রতি আমি সেই ছোটবেলা থেকেই আকৃষ্ট। মুসলমানদের ধর্মীয় কার্যকলাপ আমার ভাল লাগে। আমি ইমামকে ভালবাসি বিধায় স্ব-ইচ্ছায় মুসলমান হয়েছি। কেউ আমাকে জোরজবরদস্তি করেনি। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মনে অনেক প্রশান্তি লাভ করছি।
মঙ্গলবার আমি আসার পর ইমামের পরিবার আমাকে আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে অনেক অনুরোধ করেন কিন্তু ইমামকে ছেড়ে যেতে আমি চাইনি। ইমামই আমার শেষ ভরসা। তাই তাদের সহযোগীতায় আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনজ্জির আলী মনইর সাথে কথা বললে তিনি জানান, প্রথমে আমি এ বিষয়ে জানিনি, কেউ জানায়ও নি। বর্তমানে এ বিয়য়ে কিছুটা অবগত আছি।
ভাদেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিলাল উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে আমি অবগত আছি। গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ একে এম ফজলুল হক শিবলী জানান, আমি এ ব্যাপারে জ্ঞাত নই।