ঢাকাঃ যারা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে, তাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতে এই ধরনের কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও ভবিষ্যতে তা ‘টলারেট’ করা হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি। গতকাল শনিবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ হুঁশিয়ারি দেন শেখ হাসিনা। বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ কথা জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনে দলীয় সমর্থক প্রার্থীর পরাজয়ের কারণ অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা কি না তা তদন্তে কমিটিও গঠন করা হয় বৈঠকে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার (উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় নিয়েও আলোচনা হয়। এ ছাড়া এ বৈঠকে রমজানের আগে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে ৩১ মার্চ এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত থাকলেও প্রস্তুতি না থাকার কারণে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয় নিয়ে কথা বলেন একাধিক নেতা। কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান, ড. হাসান মাহমুদ, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, মৃণাল কান্তি দাস, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে নানা কারণ উঠে আসে। পরামর্শ দেওয়া হয় আগামী নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে দলীয় ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধির। সেই সঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহকে প্রধান এবং চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ উদ্ঘাটন করতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে সহযোগিতা করবেন আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম।
ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি বলেন, সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হলে বয়সের কারণে অনেকে প্রার্থী হতে পারবেন না। ফলে নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থ হবেন। তিনি রমজান শুরুর আগে ছাত্রলীগের সম্মেলনের দাবি জানালে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা তা মেনে নেন। সিদ্ধান্ত হয় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১১ মে। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করবেন বলে জানানো হয়।
বৈঠকে নেতারা বলেন, অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী ও এঁদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এ কারণে দলের অনেক প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়, যাতে ওই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব না পড়ে। সিদ্ধান্ত হয়, গত চার বছরে যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং যেসব নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করবেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা। আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাদের বলেন, এই দুই সিটির নির্বাচনে জয়ের জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে আসায় বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান নেতারা। বৈঠকে এ ছাড়া মুজিবনগর দিবস, কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী, শেখ জামালের জন্মদিন, মে দিবস পালনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তিনি ২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফর করবেন।