শিলাবৃষ্টির কারণে শুক্রবার মাগুরা সদর ও মহম্মদপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, পাবনার ঈশ্বরদী, লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে মাগুরা সদরে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে একজন করে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া যশোরে অভয়নগর উপজেলায় ঝড়ে বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
মাগুরা: জেলায় সন্ধ্যায় ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় শিলার আঘাতে সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের ডহরসিংড়া গ্রামের বদন মোল্লার ছেলে আকরাম হোসেন (৪৫) নিহত হন।
আকরামের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, শিলাবৃষ্টিতে জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলার জগদল, শত্রুজিৎপুর, গোপালগ্রাম, কুচিয়ামোড়া এবং বেরইল পলিতা ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেছেন, এমন শিলাবৃষ্টি আগে তাঁরা কখনো দেখেননি। শিলা পড়ে পথঘাট, মাঠ রীতিমতো কয়েক ইঞ্চি পুরু হয়ে যায়। শিলাবৃষ্টি ১০ থেকে ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়। কোথাও কোথাও ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়েছে, ঘরের চাল উড়ে গেছে। এতে আম, লিচু, বোরো ধান এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা সন্ধ্যায় বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আম, লিচু, বোরো ধান ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে। সদর ও মহম্মদপুর উপজেলায় শিলাবৃষ্টির পরিমাণ বেশি হয়েছে।
দিনাজপুর: জেলার পার্বতীপুরে দুপুরে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এতে সৈয়দ আলী (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শিলার আঘাতে আহত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ। তাঁদের কয়েকজনকে উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। নিহত সৈয়দ আলীর বাড়ি উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চৈতাপাড়া গ্রামে।
শিলার আঘাতে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বোরো ধানের ক্ষতি না হলেও সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রায়হান আলী জানান, শিলাবৃষ্টির পর হাসপাতালে এসে ২০ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। অধিকাংশ নারী-পুরুষের মাথা ফেটে গেছে শিলার আঘাতে।
পার্বতীপুর উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম শিলাবৃষ্টিতে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পার্বতীপুরে ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শিলাবৃষ্টি আঘাত হেনেছে। পার্বতীপুরের ইউএনও তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দ্রুত করার জন্য বলা হয়েছে।
ঈশ্বরদী: সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের এক গৃহবধূ জামিলা বেগম (৫০) বাড়ির পাশের লিচুবাগানে ডালপালা কুড়াতে গিয়েছিলেন। তখন শিলার আঘাতে মারা যান তিনি। পরে স্বজনেরা গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইসরাইল হোসেন তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লক্ষ্মীকুণ্ডা ছাড়াও উপজেলার শাহপরী ইউনিয়নে ব্যাপক আকারে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে উভয় ইউনিয়নের লিচুবাগানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট: জেলায় সকালে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এতে জেলার ৩৩৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি এবং ছোট ও মাঝারি প্রায় এক হাজার গাছপালা ভেঙে গেছে। জেলা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিধুভূষণ রায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, সর্বশেষ প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্যে জেলায় ৩৩৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আগামী শনি ও রোববারের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানা যাবে।
কুড়িগ্রাম: সকালে জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে কয়েক শ ঘরবাড়ির টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের পাশাপাশি পাট, ভুট্টা, করলা, পটলসহ বিভিন্ন সবজি খেত অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম, লিচু এবং সবজি খেতের। শিলাবৃষ্টির সময় অনেক বড় আকারের শিলা পড়ে। কেউ কেউ জানান, এত বড় আকারের শিলা তাঁরা আগে কখনো দেখেননি।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনে এত ব্যাপক শিলাবৃষ্টি কখনো দেখিনি। শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার মোট চার হাজার হেক্টর কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। বোরো ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও আম, লিচু এবং বিভিন্ন শবজি খেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যশোর: জেলার অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ গ্রামে ঝড়ে বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে লাইজু খাতুন (১৯) নামের এক কলেজছাত্রী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরও দুজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। লাইজু যশোর সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। তিনি প্রেমবাগ গ্রামের মোস্তাহার হোসেনের মেয়ে।
প্রেমবাগ ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সৈয়দ শওকত হোসেন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝড় শুরু হয়। এ সময় প্রেমবাগ গ্রামের সৈয়দপাড়ায় যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে ঝড়ে গাছের একটি ডাল ভেঙে বিদ্যুতের তারের ওপর গিয়ে পড়ে। এতে তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে। এ সময় বিদ্যুৎ ছিল না। ঝড় থেমে গেলে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়। তখন লাইজু ও তাঁর বান্ধবী ঐশী এবং লাইজুদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ফাতেমা বেগম পাশের দোকানে মুড়ি-চানাচুর কিনতে যাচ্ছিলেন। অসাবধানতাবশত ওই তারে জড়িয়ে লাইজু ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হন ঐশী খাতুন ও ফাতেমা বেগম।