শুধু পরুষ নয় ধর্ষণের জন্য নারীও সমান ভাবে দায়ী : ধর্ষণ রোধে নারীদেরকেও শাস্তির আওতায় আনাতে হবে !

জাতীয় বাধ ভাঙ্গা মত

Photo-1এম আরমান খান জয় :

বাংলাদেশে দিন দিন যেভাবে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে তাতে করে মনে হচ্ছে চারদিকে ধর্ষণের মহা উৎসব চলছে। ধর্ষণ হচ্ছে মূলত জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক। ধর্ষণ মানে সমঝোতার মাধ্যমে প্রচন্ড আবেগ কিম্বা অন্তরঙ্গ শারীরিক সম্পর্ক নয়। ধর্ষণ একপ্রকার আগ্রাসন এবং সহিংস অপরাধ। দুধের বাচ্চা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গৃহবধূ, বিধবা কেউই বাদ পড়ছে না ধর্ষণের হাত থেকে। বাবার হাতে ধর্ষণ, চাচার হাতে ধর্ষণ, প্রেমিকের হাতে ধর্ষণ, প্রতিবেশীর হাতে ধর্ষণ, দেবরের হাতে ধর্ষণ, ভাশুরের হাতে ধর্ষণ, অপরিচিতদের হাতে ধর্ষণ, শিক্ষকের হাতে ধর্ষণ, যেন ধর্ষণে দেশটা মহামারী হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই সবচেয়ে রসালো আকর্ষণীয়, ভয়ার্তক, মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক যে খবরটি আমরা দেখতে পাই তার নাম ধর্ষণ। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না ধর্ষক-পাষন্ড পুরুষেরা, হত্যার মত নির্মম ঘটনাও ঘটছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এভাবে ধর্ষণ-হত্যা অপ্রতিরোধ্য মানসিক ব্যাধিতে রুপান্তরিত হতে থাকলে দেশের সরকারকে সন্ত্রাস-জঙ্গী দমনের মত র‌্যাব বাহিনী ধাচের নতুন কোন বাহিনীর জন্ম দিতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ থেকে ধর্ষণ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়।

ধর্ষণের জন্য সর্বক্ষেত্রে পুরুষকেই একক ভাবে দায়ী করা হয়ে থাকে। ধর্ষণ কমাতে কিম্বা ধর্ষণের ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য অবশ্যই এই একরোখা দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। কোনটা ধর্ষণ আর কোনটা ধর্ষণ নয় এর সঠিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ধর্ষকদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এবং অস্তিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্ষণের অভিযোগ আনা প্রাপ্তবয়ষ্ক নারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এটা শতভাগ সত্য যে ধর্ষণের জন্য সর্বক্ষেত্রেই পুরুষ দায়ী নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়েরাও অধিক ভূমিকা রেখে থাকে। কোন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ধর্ষিতা হলে সেটার ক্ষেত্রে অবশ্যই হাজার বার ভাবতে হবে, এটা প্রকৃত পক্ষেই ধর্ষণ নাকি অবৈধ প্রণয়? কোন নারীর ক্ষেত্রে সে যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে কিম্বা প্রাপ্তবয়ষ্ক নারীর ক্ষেত্রে সেটা যদি হয় কোন ব্যস্ত শহরে, কোন গাড়িতে, জোরপূর্বক ঘর থেকে বের করে এনে, এর প্রভাবে যদি কোন নারীর মৃত্যু হয় কিম্বা মৃত্যুর মত পর্যায়ে চলে যায় তবে তাকে ধর্ষণ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। বাকী ধর্ষণ গুলো রীতিমতো ভাবনার বিষয়। কেননা সেগুলো সর্বক্ষেত্রেই ধর্ষণ নয়। আবেগ প্রবল হয়ে কামুক মনমানসিকতায় পুরুষের সাথে সেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক। যেটা একজন নারী পরবর্তিকালে ধর্ষণ বলে দাবি করছে।

বিস্মিত হই যখন দেখি একজন নারী ঘটনা ঘটার দুইমাস, ছয় মাস, কিম্বা এক বছর, দুই বছর কিম্বা নয় মাসের গর্ভবতী হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে বলছে আমি ধর্ষিত হয়েছি, আমি বিচার চাই। হতবাক হয়ে যাই, এরা ধর্ষণের পর কেন অভিযোগ করল না, এরা কোথায় ছিল এতোদিন? নাকি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এরা ধর্ষিতা হবার মজা নিচ্ছিল? এখন উত্তর আসতে পারে, তাদেরকে মেরে ফেলার ভয় ভীতি দেখানো হয়েছিল, ধর্ষণের ভিডিও নেটে ফাঁস করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তাই তারা বিষয়টা গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছে। এটাই যদি হয় তবে বলতে হবে প্রশাসনের প্রতি তাদের কোন আস্তা নেই। বাংলাদেশ প্রশাসন নারীদের সঠিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ তাই তারা বিষয়টা গোপন রেখেছে, কিম্বা প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে সেই বিশ্বাস টুকু অর্জন করতে পারেনি। যদি বলা হয় এতোদিনে লাজ-লজ্জায় ভয়ে বিষয়টা প্রকাশ করা হয়নি। তবে বলব ঘটনা ঘটার এতোদিন পর তারা কি সব লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে আজ আইনের আশ্রয় নিয়েছে? বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার দিকে নজর দিলে দেখা যায়, এসব ধর্ষিতাদের মধ্যে প্রায় বেশির ভাগ নারী প্রাপ্তবয়স্ক এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়–য়া মেয়েদের এই যদি হয় সচেতনতা, এমনটাই যদি হয় তাদের জ্ঞানের পরিধী তবে এমন শিক্ষা ব্যবস্তার প্রয়োজন নেই, বলতেই পারি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া চ্যানেলগুলো, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আইন রক্ষা বাহিনী মেয়েদের সচেতনতায় নির্যাতন এবং ধর্ষণ প্রতিরোধে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তারতো কোন মূল্যই থাকে না এই সব ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করলে। একটু গভীরে খোঁজ নিয়ে দেখুন প্রকৃতপক্ষে এসব ঘটনা ধর্ষণ নয়, প্রেম সম্পর্কিত অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক। দুজনের সম্মতি ক্রমেই একসময় যার নামছিল মধুর মিলন, এখন প্রেমিক দ্বারা প্রতারিত হওয়ায় প্রেমিকা সেই মধুর মিলনকে ধর্ষণ বলে দাবি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে পুরুষ দ্বারা শুধু কি নারীরাই প্রতারিত হচ্ছে? তা কিন্তু কখনোই হচ্ছে না। হাজার হাজার পুরুষরাও নারী অর্থাৎ প্রেমিকা দ্বারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এসব প্রেম সম্পর্কিত ঘটনা যদি পরবর্তিতে ধর্ষণ বলে বিবেচিত হয় তবে নির্দ্বিধায় বলতে পারি বাংলাদেশে নারী দ্বারা হাজার হাজার ধর্ষিত পুরুষ রয়েছে। সেসব বিচার কে করবে?

সমাজতন্ত্র, রাষ্ট্রতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র কেউ কিন্তু ধর্ষণের পক্ষে নয়। এখানে আমারো অবস্থান ধর্ষিতাদের বিপক্ষে নয়। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি ধর্ষণ রোধে ধর্ষকদের এমন কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যেটা দেখে কোন পুরুষ ধর্ষণের চিন্তা করতেই ভয়ে শিউরে উঠবে। সেই ক্ষেত্রে সেইসব মেয়েয়ের শাস্তির দাবি করি যারা ধর্ষিত হয়ে সঠিক সময় আইনের আশ্রয় না নিয়ে পরবর্তিতে বিভ্রান্তি ছড়ায় কিম্বা সেচ্ছায় আবেগে কিম্বা কামুক বাসনায় প্রেমের নামে পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তিতে সেটা ধর্ষণ বলে দাবী করে। এসব ঘটনা শুধু নারীর সন্মান হানী ঘটাচ্ছে না, পুরুষদের সন্মানেও ভয়াবহ আঘাত হানছে। সেই সাথে আইন-ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের উপর একটা কুপ্রভাবের জন্ম দিচ্ছে।

বিষয়টা পরিষ্কার করে তুলে ধরার জন্য আমার দেখা বাস্তব দুটি ঘটনা তুলে ধরছি। (ঘটনা-১) আমি দু’জন প্রেমিক প্রেমিকাকে জানি। মেয়েটি গোপালগঞ্জে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। আজ দু’বছর হল ওই ছেলে এবং মেয়ে প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে এক বাসায়, এক ছাদের নিচে বসবাস করছে। তারা বিয়ে না করেই দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এক বিছানায় কাটিয়ে দিচ্ছে। শুনেছি ইতিপূর্বে মেয়েটি একবার গর্ভপাতও ঘটিয়েছে। ছেলেটি বেকার বললেই চলে, শুধুমাত্র মেয়েকে ধরে রাখার জন্য কিম্বা প্রেম টিকিয়ে রাখার জন্য মেয়ের ইচ্ছেতেই স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক বাসায় বসবাস করছে। এখন কোন কারনে যদি ছেলেটি ওই মেয়েকে বিয়ে করতে ব্যর্থ হয় কিম্বা মেয়েটিকে প্রত্যাখ্যান করে নিশ্চয় মেয়েটি ছেলেটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করতেই পারে। ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই তার বাস্তবতা বহন করে। আর আমরা সেই ক্ষেত্রে ছেলেকেই একক ভাবে দায়ী করি। এইসব ঘটনায় ছেলেরা যেমন অপরাধী ঠিক সমপরিমাণ মেয়েরাও অপরাধী। সেই সব ক্ষেত্রে মেয়েরা শাস্তি না পেয়ে খুব সহজেই কিন্তু পার পেয়ে যাচ্ছে।

(ঘটনা-২) ২০১৭ সালের ঘটনা। আমি তখন ও সাংবাদিকতা করি। অনেক রাতে যাতায়াতে সমস্যা হওয়ার করনে গোপালগঞ্জে একটা ফ্লাট বাসা ভাড়া করে ৪/৫ জন ব্যাচেলর ম্যাচ করে থাকি। ফ্লাটে মোট তিনটা রুম ছিল। আমি ছাড়া বাকিরা ছিল আমার সিনিয়র/বড় ভাই। এক সময় ম্যাচের এক বড় ভাইয়ের সাথে স্থানীয় একজন মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সময়-অসময় প্রায়ই মেয়েটিকে আমাদের বাসায় আসতে দেখতাম। মেয়েটা যখন বড় ভাইকে ফোন করে আসতো, তখন তাকে বলতে দেখতাম আমি বাসায় নেই বাহিরে আছি। কিম্বা মেয়েটি বাসায় আসবে এই ভয়ে সে বাসা থেকে পালিয়ে বাঁচত। মেয়েটা হয়তো বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরেছিল, তাই সে যখন বাসায় আসত বড় ভাইকে জানাত না। হঠাৎ করে বাসায় এসে সোজা রুমে ঢুকে পড়ত। এরপর দরজা বন্ধ, জানালা বন্ধ, কম্পিউটারে বিকট শব্দে গান বাজত। আমরা সবাই স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারতাম রুমের ভেতর কি হচ্ছে। এ ভাবেই মেয়েটি প্রায়ই বাসায় এসে তার প্রেমিকের সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হত। বাসার বাকী সবাইকে দেখতাম লজ্জায় নিজ নিজ রুমে লুকিয়ে পড়তে। কেউ কেউ এই দৃশ্য দেখে যৌন উত্তেজনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠত। মেয়েটি যখন বাসা থেকে চলে যেত, তখন সবাই এক এক করে বের হয়ে আসতো। এখন বিষয় হচ্ছে এরকম একটা পরিবেশে মেয়েটা কিন্তু গণধর্ষণের শিকার হতে পারতো। এটা কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। মেয়েটা যখন গণধর্ষনের শিকার হত, তার পুরো দায় কিন্তু পুরুষদেরকেই নিতে হতো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে মেয়েটি কি নির্দোষ? সেটা কিন্তু কখনোই না। তবুও এসব ক্ষেত্রে মেয়েদের কোন প্রকার শাস্তি হচ্ছে না। একক ভাবে শুধু মাত্র পুরুষকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয় গুলোর উপর সঠিক পরিসংখান কিম্বা অনুসন্ধান করলে এমন হাজার হাজার ঘটনা বের হয়ে আসবে, যেখানে শুধু পরুষ নয় ধর্ষণের জন্য নারীও সমান ভাবে দায়ী।

আমাদের দেশে বিভিন্ন সংস্থাগুলো এবং প্রশাসন নারী নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা গুলোর জরিপ করে থাকে। সে সব ক্ষেত্রে একক ভাবে শুধু পুরুষকেই দায়ী করা হয়। এসব ঘটনার অন্তরালে যে সব ঘটনা লুকায়িত থাকে তা কিন্তু কখনোই প্রকাশিত হয় না। সরকার ধর্ষণ প্রতিরোধে যত রকম প্রচেষ্টাই চালাক না কেন, আইনের আওতায় এনে যত কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করুক না কেন, তবুও ধর্ষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে জানতে হবে প্রত্যেকটি ধর্ষণের প্রকৃত রহস্য। আইন শুধু নারীদের জন্য নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও সবল ভূমিকা রাখতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *