নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার পর এবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তার দলের চেয়ারপারসনের গ্রেফতারের আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সরকার যেভাবে ছক তৈরি করছে তাতে যেকোনো মুহূর্তে দেশনেত্রীকে (খালেদা জিয়া) আটক করতে পারে।”
শনিবার দুপুরে ‘৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে দেশনেত্রী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “যে যেখানে আছেন সেখান থেকেই প্রস্তুতি নিন। যাতে সময় হলেই বেরিয়ে পড়তে পারেন। নেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকবেন না।”
বিএনপির কথা ও কাজে ফাঁক থাকায় জনগণ মাঠে নামছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জনগণের কাছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নর্দমার চেয়েও দুর্গন্ধময়। আওয়ামী লীগ দেখলেই জনগণ এখন নাকে রুমাল দেয়। কিন্তু তার মানে এই নয়, জনগণ বিএনপিকে খুব পছন্দ করে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের কথা ও কাজে ফাঁক থাকায় ও কমিটমেন্ট না থাকায় জনগণ মাঠে নামছে না। দলের বড় বড় পদ নেয়ার ব্যাপারে আমরা আগ্রহ দেখাই, কিন্তু পদ নেয়ার পর আমাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।”
স্বৈরাচার পতন দিবসের আলোচনা সম্পর্কে গয়েশ্বর বলেন, “১৭৫৭ সালের মীর জাফর, ১৯৭১ সালের রাজাকার, ১৯৭৫ সালের বাকশাল, ১৯৮১ সালের স্বৈরাচার এবং ওয়ান ইলেভেনের সংস্কার— এই পাঁচটি শব্দ আমাদের অভিধানে নিকৃষ্ট শব্দ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই মীর জাফর, রাজাকার, স্বৈরাচার, বাকশাল এবং সংস্কারপন্থীদের বুকে টেনে নিয়েছে, কোলাকুলি ও মোলাকাত করেছে।”
আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ আমলে এরশাদকে বিএনপি আন্দোলন করায় এর সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, “ওই সময় বিএনপির যে সব অনুষ্ঠানে এরশাদ উপস্থিত থেকেছেন সে সব অনুষ্ঠান মঞ্চ তো দূরের কথা তার ধারের কাছেও আমি যাইনি।”
গয়েশ্বর বলেন, “এ দেশে স্বৈরাচার এরশাদ ও রাজাকার জামায়াতের সঙ্গে মাঝে মাঝে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলকেই বসতে হয়, সে কেবল ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার জন্য। ব্যক্তি স্বার্থের জন্যও কেউ কেউ স্বৈরাচারের দালাল হয়েছেন। ১৯৮১ সালের পর বিএনপির অনেক বাঘা বাঘা নেতা এরশাদের বুটের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, “স্বৈরাচার এরশাদের প্রায় ৭৫ ভাগ এমপি মন্ত্রী এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে অবস্থান করছেন। সুতরাং স্বৈরাচারের পারিষদবর্গকে দলে রেখে স্বৈরাচার পতন দিবস পালন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটি আমাদের ভেবে দেখতে হবে।”
দেশনেত্রী পরিষদের সভাপতি একেএম বশির উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন ও গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।