ভয়ঙ্কর বাবুলের খোঁজে পুলিশ

Slider নারী ও শিশু

buti1

 

 

 

 

 

হবিগঞ্জে কিশোরী বিউটি আক্তারকে এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করায় ফের ধর্ষণ করে হত্যা করার ঘটনার হোতা বাবুল মিয়াকে গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশের একাধিক টিম। দেশজুড়ে আলোচিত এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে পুলিশ। এ ছাড়া আটক করা হয়েছে বাবুলের খালা ও খালাতো বোনকে। গতকাল এই তদন্ত কমিটি গঠন এবং ওই দুজনকে আটক করা হয়।

বিউটি আক্তার (১৪) হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে। একই গ্রামের মৃত মলাই মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া (৩০)।

চলতি বছর ২১ জানুয়ারি বাড়ি থেকে বিউটিকে অপহরণ করে বাবুল ও তার সহযোগীরা। দীর্ঘ এক মাস বিউটিকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে সে। এরপর বিউটিকে তার বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায় বাবুল। বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায় তার বাবা সায়েদ আলী গেল ১ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলায় বাবুল ও তার মা স্থানীয় ইউপি সদস্য কলমচানকে আসামি করা হয়। ৪ মার্চ আদালত শায়েস্তাগঞ্জ থানাকে আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। মামলার পর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাবুল। তার ভয়ে বিউটিকে নানার বাড়ি উপজেলার গুণীপুর গ্রামে পাঠিয়ে দেন সায়েদ আলী। কিন্তু ভয়ঙ্কর বাবুলের হাত থেকে রক্ষা মেলেনি বিউটির। ১৬ মার্চ রাতে নানার বাড়ি থেকে বিউটিকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করে হাওরে লাশ ফেলে রাখে বাবুল। পরদিন তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বাবুলকে প্রধান আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন বিউটির বাবা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিউটির লাশের ছবি ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। নানামুখী চাপে পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। ২১ মার্চ গ্রেফতার করা হয় বাবুলের মা কলমচান এবং সন্দেহভাজন ইসমাইল নামের এক যুবককে। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় বাবুল। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে পুলিশ বলছে, বাবুলকে গ্রেফতারে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। যে কোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি আনিসুর রহমান বলেন, ‘বাবুলকে গ্রেফতারে বিভিন্ন টিম কাজ করছে। তার খোঁজ চলছে। দ্রুততম সময়ে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করছি।’ এদিকে গতকাল সকালে বাবুলের খালা জহুরচান বিবি (৬০) এবং খালাতো বোন ঝুমা আক্তারকে (২০) আটক করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণডোরা গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আপাতত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।’ বিউটি আক্তারকে ধর্ষণ এবং ফের ধর্ষণ করে হত্যার আলোচিত ঘটনায় গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আ স ম শামছুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত দলটি তিন সদস্যের। সদস্যরা হলেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা ও সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।’ এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, বখাটেপনা এবং নানা অনৈতিক কাজের হোতা সে।

২০১০ সালে সে সিলেটের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে ওই মহিলাকে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বাবুল। বিয়ের পরও পাল্টায়নি তার চরিত্র। এলাকার কিশোরী-মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করত সে। ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের তাউছ মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাবুল নানা অপকর্মের হোতা। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, নানা অসামাজিকতার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সে কাউকে তোয়াক্কা করে না। এলাকার মুরব্বিদেরও পরোয়া করে না বাবুল।’

ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আদিল জজ মিয়া বলেন, ‘বাবুলের অপকর্ম সম্পর্কে এলাকায় নানা কথা চালু আছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’

বিউটি আক্তারের বাবা সায়েদ আলী ও মা হুসনে আরা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বখাটে বাবুলের কারণে আমাদের মেয়েটা বাঁচতে পারল না। আমরা বাবুলের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *