গত কয়েক দিনের কানাঘুষাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বেইজিং গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে দুই দেশ।
এ সপ্তাহের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ব্যবহার করেন এমন একটি ট্রেন যখন বেইজিং দেখা যায়, তখন থেকেই এ নিয়ে গুজব শুরু হয়। কিন্তু দুই দেশের কেউই তখন বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
এখন শিনহুয়া জানাচ্ছে, কিম চীনের নেতা শি জিন পিংয়ের সঙ্গে ‘সফল আলোচনা’ করেছেন।
এ সফরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, কারণ একে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক এবং দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিমের সঙ্গে বৈঠক করার অভূতপূর্ব প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বিশ্লেষকেরা আগেই ধারণা করেছিলেন, ঐ বৈঠকের আগে চীন ও উত্তর কোরিয়া নিজেরা বৈঠক করবে।
শিনহুয়া জানিয়েছে, কিম চীনের নেতাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি পারমানবিকীকরণ বন্ধে প্রতিশ্রুতবদ্ধ।
উত্তর কোরিয়ার কেসিএনএ সংবাদ সংস্থা এ সফরকে একটি ‘মাইলফলক’ বলে বর্ণনা করেছে।
কিম গত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের বিদেশ সফরে গেলেন। চীন সাধারণত পিয়ংইয়ং এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আলাপ আলোচনার মধ্যস্থতা করে থাকে।
কিম জং উনের রহস্যময় বেইজিং সফর
বিবিসি ও রয়টার্স
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের সম্ভাবনার মধ্যেই চলতি সপ্তাহে কিম জং উন ‘চীন সফর’ করছেন বলে জানা গেছে। সোমবার তিনটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ প্রথম বিদেশ সফরে কিম বেইজিংয়ে অবস্থান করছেন বলে জানায়। খবর সত্যি হলে ২০১১ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর এবারই প্রথম দেশের বাইরে গেলেন উত্তর কোরিয়ার এ শীর্ষ নেতা।
টেলিগ্রাফ ও আল সাবাহ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার চীনা ইন্টারনেটের কঠোর বিধিনিষেধ এবং বেইজিংয়ে বর্ধিত নিরাপত্তাব্যবস্থা ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের আগেই উত্তর কোরীয় নেতার চীনের রাজধানী সফর করার ব্যাপক গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র একদিন আগে এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশের পর এ সফর অনুষ্ঠিত হয়। তবে চীনা নেতারা এ ব্যাপারে মুখ একেবারে বন্ধ করে রেখেছেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘যদি কোনো খবর থাকে তাহলে আমরা তা প্রকাশ করব।’
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সাধারণত যে স্থানে বিদেশী অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান তার আশপাশে গতকাল কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর আগের দিন জাপানি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, উত্তর কোরিয়ার একজন সিনিয়র নেতা বেইজিং সফরে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে কিমের এ সফরের সংবাদকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আন্তর্জাতিক মহল, দক্ষিণ কোরিয়াও এ বিষয়ে ‘গভীর নজর’ রাখার কথা জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ কোরিয়ার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সব সম্ভাবনার পথ খোলা রেখেই প্রেসিডেন্সিয়াল ব্লু হাউজ বেইজিংয়ে কী ঘটছে, সেদিকে গভীর নজর রাখছে,’ যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের আগে চীনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেও দেখছেন তিনি। এপ্রিলের শেষে ও মে মাসে দুই কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওই বৈঠক আয়োজনে চেষ্টা চলছে বলে এর আগে সিউল ও ওয়াশিংটনের বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল।
মঙ্গলবার সকালে রয়টার্সের এক প্রতিনিধি বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন দিয়াওয়ুতাই হাউজ থেকে একটি গাড়িবহরকে বেরিয়ে উত্তরের পথে যেতে দেখেছেন। চীন সফরে আসা বিভিন্ন দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারাই সাধারণত এ অতিথি ভবনে থাকেন। মঙ্গলবার সকালে বের হওয়া গাড়িটিতে কারা ছিলেন তা জানা যায়নি। বহরের গন্তব্যও জানা যায়নি।
বেশ কয়েকটি কূটনৈতিক সূত্রও ‘সম্ভবত কিম চীনে অবস্থান করছেন’ বললেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত করতে পারেনি।
বিশেষ ট্রেন
উত্তর কোরিয়ার নেতারা সফরের প্রয়োজন হলে তিনি একটি ট্রেনের চড়ে সে সফরে যেয়ে থাকেন, যা অন্য কোনো দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এ হলো রহস্যময় ‘সুপার’ ট্রেন। সোমবার বেইজিংয়ে একটি গাঢ় সবুজ বর্ণের ট্রেন উপস্থিত, যার গায়ে হলুদ বর্ণের বর্ডার ছিল। এমনই ট্রেনে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন কিম পরিবার চলাচল করে। বেইজিংয়ের স্টেশনে ট্রেনটি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর গতকাল বিকেলেই সেটি স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে। যদি ট্রেনটিতে কিম জং উন থাকেন তাহলে এটি হবে ২০১১ সালে পিতার মৃত্যুর পর তার প্রথম বিদেশ সফর। কিম দেশের ভেতরে সফরের সময় প্রায় সময় ট্রেন ব্যবহার করেন কি না তা জানা যায়নি। কিমের পিতা বিমান ভ্রমণ পছন্দ করতেন না। তিনি ট্রেনে ভ্রমণ করাকে অগ্রাধিকার দিতেন।