রাজধানীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসার তৌফিক আহমেদ মশা নিধনে গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হটলাইনে ফোন দেন। তখন তাকে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার এলাকায় সিটি করপোরেশনের লোকেরা মশার ওষুধ ছিটিয়ে আসবেন। কিন্তু গতকাল ২৬ মার্চ পর্যন্ত গত আট দিনেও তার এলাকায় মশার ওষুধ ছিটায়নি ডিএনসিসি। ফলে ওই এলাকায় মশার উৎপাত চলছে সমানতালে। তৌফিক আহমেদ বলেন, ডিএনসিসির হটলাইনে জানানোর পর নাম, ঠিকানা লিখে রেখেছে। বলেছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওষুধ দেবে। কিন্তু আজো দেয়নি। ফলে মশার অত্যাচারে ঘুমানো দায় হয়ে পড়েছে।
গুলশান-১ এর বাসিন্দা মো: ফারুক। তিনি ডিএনসিসির হটলাইনে পাঁচবার ফোন দেয়ার পর সিটি করপোরেশনের লোকেরা এসে ওষুধ দিয়ে গেছে। মো: ফারুক নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রথমে ফোন দেয়ার পর বলেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওষুধ দেবে। কিন্তু দেয়নি। এভাবে পাঁচবার ফোন দেয়ার পর ওষুধ দিয়ে গেছে। তাও শেষদিন বলার চার দিন পর এসে দিয়ে যায়। শেষবার হটলাইনে ফোন দিলে সুপারভাইজারের মোবাইল নম্বর দেয়। তাকে ফোন দিলে বলেন, আমাদের প্রোগ্রাম আছে তিন দিন পর ওষুধ দেবো। এভাবে অনেক চেষ্টার পর ওষুধ দিয়ে গেছে। কিন্তু দুই দিন না যেতেই একই অবস্থা। মশার উপদ্রব আবার বেড়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের লোকেরা আর আসে না।
গুলশান-২ এর ৪৩ নম্বর রোডের একটি বাড়ির কেয়ারটেকার মো: শাহিন জানান, হটলাইনে ফোন দেয়ার চার দিন পর এসে ওষুধ দিয়ে গেছে। এখন আবার একই অবস্থা। মশার যন্ত্রণা আবার বেড়েছে। এখন আমরা নিজেদের উদ্যোগেই স্প্রে করে মশা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।
মোহাম্মদপুর কনকর্ড টাওয়ারের বাসিন্দা শামসুল আলম ডিএনসিসির হটলাইনে জানানোর পর তাদের এলাকায় ওষুধ দিয়ে যান ডিএনসিসির কর্র্মীরা। কিন্তু এখন মশার উৎপাত আগের মতোই। শামসুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, ওষুধ দিয়ে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। দুই-একদিন মশা কম ছিল। কিন্তু এখন মশার অত্যাচার আগের মতোই চলছে। ডিএনসিরি লোকেরা যখন ওষুধ দেয় তখন তাদের বলেছিলাম আবার কয়েক দিন পর ওষুধ দিয়ে যাবেন কিন্তু এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও ডিএনসিসির লোকেরা আর আসেনি।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, মশানিধনে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি জনগণের অভিযোগ জানতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি হটলাইন চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। হটলাইনটির নম্বর হচ্ছে-০১৯৩২৬৬৫৫৪৪। ঘোষণা দেয়া হয় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস সময়ে এ হটলাইনে অভিযোগ জানানো যাবে। এরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারীরা ওই এলাকায় মশার ওষুধ প্রয়োগ করবেন। তাদের এ আহ্বানে ওই দিন সকাল থেকেই ফোন করতে শুরু করেন নগরবাসী। হটলাইনটিতে ফোন করলেই রিসিভ করেন ডিএনসিসির অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি জানান, ২৮ ফেব্রুয়ারি ফোন করেন ৬৫ জন, এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকার ৬২ জন। ১ মার্চ ফোন আসে ১৩৯টি, এর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকার ১২৫ জন। ২ মার্চ ডিএনসিসি এলাকার ৬৪টি, ৩ মার্চ ৯০টি, ৪ মার্চ ৭৩টি, ৫ মার্চ ৬৬টি, ৬ মার্চ ৬৯টি, ৭ মার্চ ৪২টি, ৮ মার্চ ২৭টি, ৯ মার্চ ১৯টি, ১০ মার্চ ১৮টি, ১১ মার্চ ১৫টি, ১২ মার্চ ১১টি, ১৩ মার্চ ১৫টি, ১৪ মার্চ ১৮টি, ১৫ মার্চ ১১টি, ১৮ মার্চ ১৩টি ফোন কল আসে।
১৯ মার্চ ডিএনসিসি মশার নিধনে বিশেষ এক সভা আহ্বান করে। সভায় বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা মশার অত্যাচারের কথা জানান। সভায় মশা নিধনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানান প্যানেল মেয়র ওসমান গনি। তিনি ২০ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সেবা সপ্তাহও ঘোষণা করেন। প্যানেল মেয়র জানান, ওষুধের সংগ্রহ দ্বিগুণেরও বেশি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে ওষুধ ছিটালে অক্টোবর পর্যন্ত চলে যাবে ওষুধ। তারপরও আরো ওষুধ কেনা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য লোকবল ও গাড়ির সঙ্কট রয়েছে বলে মেয়র উল্লেখ করেন। সভায় ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত মশা নিধনে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট, ২১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর, ২১ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর এবং ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো হয়।
কিন্তু এত কিছুর পরও ডিএনসিসি এলাকায় মশার উৎপাত কমেনি। এ জন্য ডিএনসিসির হটলাইন চালু করাকে এলাকাবাসী একটি তামাশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।