সম্প্রতি অভিনেতা মোশাররফ করিমের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বইছে। এ বিষয়ে ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অভিনেত্রী নাজনীন চুমকি। ফেসবুক হ্যান্ডেলে দেয়া চুমকির বক্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘মোশাররফ করিম ভাইকে নিয়ে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে সেইসব কমেন্ট পড়ে মনে হলো, আমার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি-
* বাসার কাছেই মুদির দোকান পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়, তিনটা বাসা পরেই কন্সট্রাকশন কাজ চলছে এমন একটি বাসার ছাদ থেকে অশ্লীল কিছু কথা কানে আসলো, থেমে উপরের দিকে তাকালাম, কুৎসিত হাসি, সাহস করে বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে আমাদের বাসা দেখিয়ে জানালাম তার মিস্ত্রিরা কি ধরনের কুৎসিত কথা বলছে, আমি কি সেক্টরের লোকজন খবর দিবো নাকি নিকটস্থ থানায়..??? সাথে সাথে বিনয়ের সাথে দুঃখিত বলেছিল ঠিকই ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কিন্তু তারপরও মিস্ত্রিদের কুৎসিত হাসি থামেনি।।
অথচ – আমি ফুলহাতা পাঞ্জাবি এবং মাথায় কাপড় দেয়া ছিলাম
* কর্মক্ষেত্রে যাব, রিকশার জন্যে দাঁড়িয়ে আছি। ধুলোর কারণে, মাথায় ওড়না দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে দাঁড়ানো, দুটো ছেলেসহ একটা রিকশা যাবার সময়, ছেলে দুটো কিছু অস্বস্তিকর কথা বললো এবং কথাগুলো এমন মজা পেল যে তাদের সাথে রিকশাওয়ালাও হাসল… অদ্ভুত.. আমি বোকা হয়ে গেলাম.. হাঁটুর বয়সী দুই ছেলে আর রিকশাওয়ালার মানসিকতা দেখে। এবং- আমি যথারীতি সালোয়ার কামিজ এবং মাথায় কাপড় দেয়া ছিলাম
* একটা ট্র্যাফিক সিগন্যাল এ একটা বাসের পাশে আমাদের রিকশা থামলো, আমাদের মানে আমার পাশে একজন পুরুষ বসা। তো, অনেকক্ষণ যাবৎ বাসে বসা দুজন পুরুষ বিভিন্নভাবে ইশারা ইঙ্গিতে আমাকে অনেক কিছু বোঝানো এবং যা বললে একজন মেয়েকে চরম অপমান করা হয় সে ধরনের কথাও বলছিল। পাশের মানুষটা শুনছে সেসব কথা, প্রতিবাদ করা দূরে থাক আমাকেও থামাচ্ছিল। এক পর্যায়ে, আমি পা থেকে স্যান্ডেল খুলে তাদেরকে দেখাতেই, মুহূর্তের মধ্যেই ঐ ছেলে দুইজন বাস থেকে নেমে আমার দিকে তেড়ে আসে, গালিগালাজ করতে থাকে, রাগে আমিও চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু আমার পাশে থাকা ঝামেলা এড়ানোর জন্যে ঐ ছেলে দুটোকে ‘সরি’ বলে একপ্রকার সেই পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে আসে। ঐ দিনের পর থেকে পাশে থাকা ঐ মানুষটাকে দূরের মানুষ করে দিয়েছি। যাহোক…. ঐদিনও – আমি সালোয়ার কামিজ পরে ছিলাম।
এমন বেশকিছু ঘটনা আছে আমার জীবনে, আমাদের মেয়েদের জীবনে ঘটছে, প্রতিনিয়ত। আসলেই ছেলে/পুরুষেরা এসব করে থাকে সংকীর্ণ মানসিকতা বা বিকৃত রুচি বা নোংরা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
ঠিক এই কথাগুলোই বলেছেন ‘মোশাররফ করিম’ ভাই। ভুল কি বলেছেন..!!!
যখন ইন্ডিয়ান চ্যানেল এ Satyamev Jayate-এ অনুষ্ঠানে আমির খান সমাজ-রাষ্ট্র-সমাজ নিয়ে কথা বলেন তখন সেই বাহবা দিই ‘আমির খানের সাহস আছে!!’ ‘বাঘের বাচ্চা’ আমির খান বলেই পারে, আমাদের দেশে এমন কেউ নেই’ ‘আমাদের দেশে এমন প্রোগাম কেন যে করে না!’
এখন যেই মোশাররফ করিম ভাই সুস্থ-সুন্দর-উচিত কথা বললেন, গায়ে লেগে গেলো? কেন রে ভাই? কথা তো আপনাদেরও বলা উচিত বা প্রতিবাদ করা উচিত কিন্তু সেটা মোশাররফ করিম ভাইয়ের বিরুদ্ধে না সমাজের ঐসব পুরুষ বা ছেলেদের বিরুদ্ধে, প্লিজ।
তারপরও আমি এবং আমরা মেয়েরা রাস্তায় নামি, কাজে যায়, কারণ, আমাদের আশে পাশে কিছু সুশীল পুরুষ মানুষ আছেন। জানি, যারা সুশীল তারা সবসময়ই সুশীল থাকবেন।’