আরিফুর রহমান এসেছেন বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে। তাঁর রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন ইসিজি। কিন্তু টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ইসিজির কোনো ব্যবস্থা নেই। পরামর্শ দেওয়া হলো দ্রুত অন্য কোথাও নিয়ে যেতে। বাধ্য হয়ে আরিফের অভিভাবকরা তাঁকে নিয়ে গেল। শুধু আরিফ নয়; তাঁর মতো হাজারো রোগীকে বাধ্য হয়েই যেতে হয় বেশি খরচার আধুনিক চিকিৎসাসংবলিত কোনো না কোনো হাসপাতালে।
ষাটের দশকের প্রথম দিকে টঙ্গীতে শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠাকালে শিল্প শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘মাছিমপুর থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র’ নামের হাসপাতালটির জন্ম হয়। পরে এর নাম হয় ‘৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতাল’। বর্তমানে এটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। একসময়ের মাছিমপুর থানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আজকের টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল। পুরনো সেই জীর্ণ ভবনের বদলে এখন নির্মিত হয়েছে আটতলা আধুনিক ভবন। ৮৩ জনের স্থলে সৃষ্টি করা হয়েছে ১৮৫ জনের পদ। কিন্তু এক বছর আগে এসব করা হলেও এখনো তা বাস্তব হয়ে ওঠেনি। ফলে সেবার ক্ষেত্রে যেই-সেই। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া জটিল কোনো রোগের চিকিৎসা এখানে মেলে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় সৃষ্ট পদে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আর তাই পরিকল্পিত আধুনিক হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়; দক্ষ জনবলের অভাবে চার বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া চিকিৎসা সরঞ্জামও পড়ে আছে মুখ থুবড়ে। পরিবর্তন আসেনি চিকিৎসার ধরন ও মানে। এখানে হৃদরোগ, হাঁপানি, চক্ষু এবং নাক-কান-গলা বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো নেই। নেই কোনো বৈদ্যুতিক জেনারেটরও। দেশের সর্বত্র যখন ডিজিটালের ছড়াছড়ি, তখন এই হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটিও রয়ে গেছে সেই এনালগেই।
সময়ের পরিক্রমায় টঙ্গী শিল্পাঞ্চল রূপ নিয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায়। বর্তমানে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন হাজার শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এলাকার লোকসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এ ছাড়া ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি টঙ্গীতে হওয়ার কারণে এখানে শ্রমিক সংঘর্ষ, যান্ত্রিক ও সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। টঙ্গী এলাকার গুরুত্ব বিবেচনা করে এই হাসপাতালে ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বায়োকেমিস্ট এনালাইজারসহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়, যা ব্যবহার করা হলে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক রোগী বিনা মূল্যে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করানোর সুযোগ পেত।
হাসপাতলের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কমর উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’