মমতা বলছেন, মোদি দেশের কল্যাণের প্রতীক নন। তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। ভোটব্যাংকের রাজনীতি করছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছেন। সাম্প্রদায়িকতার উসকানি দিচ্ছেন। দেশের চলমান নোট বাতিল করে দেশের অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিয়েছেন। জিএসটি চালু করে দেশের সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ীদের বিরাগভাজন হয়েছেন। তাই মোদিকে কোনোভাবেই আর গদিতে রাখা যাবে না। তাঁকে হটাতে এখন দেশের বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একটি কর্মসূচির আওতায় বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হলে ২০১৯ সালেই দেশ থেকে বিজেপি ‘ফিনিশ’ হয়ে যাবে।
শুধু মমতা কেন, এখন মোদির একেবারে কাছের শরিক দল মহারাষ্ট্রের শিবসেনাও নেমেছে বিরোধিতায়। তারা বলছে, আর বিজেপি বা মোদিকে সমর্থন নয়।
দেশের মোদিবিরোধীরা ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছে, বিজেপি ও মোদির এখন ঘোর দুর্দিন শুরু হয়েছে। ক্ষমতার চার বছরের মাথায় মানুষও মোদির ম্যাজিকের ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলে সরে আসতে শুরু করেছে। মানুষ উপলব্ধি করতে শুরু করেছে, বিজেপি ভোটের রাজনীতিকে অস্ত্র করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে।
বিজেপির এককালের শরিক বন্ধু শিবসেনা একহাত নিয়েছে তাদের দলীয় পত্রিকা ‘সামনা’য়। এতে বলা হয়েছে, আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ও কংগ্রেসের আসনসংখ্যায় পরিবর্তন ঘটবে। ওই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাবমূর্তির সঙ্গে লড়াই হবে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর। যদিও বিজেপিকে মোকাবিলা করার জন্য বিরোধীদের এখনো কোনো শক্তিশালী নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। তবে এখন বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। তবে এ কথাও ঠিক, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা দিনে দিনে বাড়ছে।
এই মুহূর্তে রাহুল গান্ধী নন, বরং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহারাষ্ট্রের এনসিপির নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শারদ পাওয়ার এবং উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বহুজন সমাজপার্টির নেত্রী মায়াবতী ভারতে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন।
গত বুধবার প্রকাশিত ভারতের উত্তর প্রদেশের দুটি এবং বিহারের একটি লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয় বিরোধীদের মনোবল দৃঢ় করেছে। এর থেকে পরিষ্কার হয়েছে, দেশের মানুষ এখন মোদি-ম্যাজিক থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর সংসদীয় শক্তির বর্তমান পরিস্থিতি বদলে যাবে। আসনসংখ্যাও ভিন্ন হবে। বাড়বে কংগ্রেসের আসন। কমবে বিজেপির আসন।
যদিও এখন লোকসভায় বিজেপির এককভাবে আসন রয়েছে ২৮০। সেখানে কংগ্রেসের মাত্র ৪৮টি। ২০১৯ সালে সেই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। ‘সামনা’ লিখেছে, বিজেপির আসন ১১০-এ নেমে যেতে পারে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের তিনটি লোকসভা আসনের উপনির্বাচন এবং বিজেপির শরিক দল তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনা বিজেপির জন্য অশনিসংকেত বহন করছে।
বলা হচ্ছে, ত্রিপুরার মতো ক্ষুদ্র একটি রাজ্যে বিজেপির জেতার আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের তিনটি লোকসভার আসনে বিজেপির ফলাফল।
এদিকে ভারতের প্রখ্যাত আইনজীবী ও সাবেক মন্ত্রী রাম জেঠমালানিও বলেছেন, দেশের কল্যাণের জন্য বিজেপিকে হটাতে হবে।
২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের ১০টি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হয়। এর মধ্যে ৯টিতেই পরাজিত হয়েছে বিজেপি। তাই শিবসেনা দাবি করছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন ২৮০ থেকে কমে ১১০-এ নেমে আসবে।
বিরোধীদের নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়তে মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে আজ সোমবার তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও কলকাতায় আসছেন। তিনি বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় নবান্নে বৈঠক করবেন মমতার সঙ্গে। সেখানেই আলোচনা হবে মোদি হটানোর নানা দিক নিয়ে। কথা হবে মোদিবিরোধী তৃতীয় ফ্রন্ট গড়া নিয়ে।
তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে মমতা গত শুক্রবার কথা বলেছেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের সঙ্গেও। দিল্লির আম আদমি পার্টির নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। কলকাতায় কথা হয়েছে গুজরাটের প্যাটেল সম্প্রদায়ের তরুণ নেতা হার্দিক প্যাটেলের সঙ্গে।
কংগ্রেস নেতারাও এগোচ্ছেন মমতার তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের প্রক্রিয়ার পথ ধরে। তৃতীয় ফ্রন্টে উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব ও বহুজন সমাজপার্টির নেতা মায়াবতীও আসছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের পিডিপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী মেহেবুবা মুফতিও সংকেত দিয়েছে এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসার। ফলে দিনে দিনে যে মোদিবিরোধী শক্তি জোরদার হচ্ছে, তা এখন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় বিজেপির মোদি-ম্যাজিক এখন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।