ভারতের কাছে হেরে ট্রফি জয়ের স্বপ্ন আরেকবার ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছেন, এ ধরনের ফাইনাল নিয়ে বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। আমি মনে করি, আমরা দারুণ খেলেছি। এই ম্যাচে যে কেউ জিততে পারত। তবে ভারতীয় খেলোয়াড়রা তাদের নার্ভ শক্ত রেখেছিল।
সাকিব বলেন, আমরা ১৮ ও ১৯তম ওভারে আমাদের সেরা বোলারকে দিয়ে বল করিয়েছি। কিন্তু এমনকি রুবেলও এক ওভারে ১৫ রান দিলেও সমস্যা হতো না। আমরা সামাল দিতে পারতাম। সে তার লেন্থ খুব বেশি মিস করেনি। তবে ধন্যবাদ দিতে হয় দিনেশ কার্তিককে। সে তার প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছে। আমরা জানতাম, ১৬৬ রান ডিফেন্ড করা কঠিন। আমরা তবুও ১০০ ভাগ দিতে চেয়েছি। সবাই ১০০ ভাগ দিয়েছে। পরাজয় কষ্ট দেয়, তবে আমরা ভালো খেলেছি। মেহেদি মাত্র এক ওভার করেছে। এটি ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত। আমাদের সবাই বল করতে পারে। আমরা এখান থেকে তবুও অনেক ইতিবাচক কিছু নেব। আমরা একদিন জয়ী দলে পরিণত হবো।
সৌম্যর শেষ ডেলিভারিতে কার্তিকের ছক্কা
ফাইনাল জিততে শেষ বলে ভারতের প্রয়োজন ৫ রান। বল হাতে বাংলাদেশের মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। ব্যাট হাতে স্ট্রাইকে ভারতের উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক। সৌম্যর শেষ ডেলিভারিটি কভার দিয়ে উড়িয়ে মেরে ছক্কা আদায় করেন নেন কার্তিক। এতেই শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের শিরোপা জিতে নেয় ভারত। ফাইনালে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান তুলে শিরোপার স্বাদ নেয় টিম ইন্ডিয়া।
শ্রীলংকার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেয় ভারত। ব্যাটিং-এ নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উদ্বোধণী জুটিতে ২৭ রান যোগ করেন তারা। এরপরই বিচ্ছিন্ন হন তারা। ১১ রানে থাকা লিটনকে ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন অফ-স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর।
লিটন ফিরে যাবার ৬ বল পর বিদায় ঘটে আরেক ওপেনার তামিমেরও। ১৩ বলে ১৫ রান করে আউট হন তামিম। ২৭ রানেই পরপর দু’উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেন চার নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। ২ বল মোকাবেলা করে ১ রান করে সৌম্য ফিরে গেলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩৩।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান ও মুশিফকুর রহিম। দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। তবে দলের স্কোরটা বেশি দূর নিতের পারেননি সাব্বির ও মুশফিক। ৩১ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন তারা। এরমধ্যে ৯ রান অবদান রেখে থেমে যান মুশফিকুর। দলীয় ৬৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর আবারো বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। সাব্বির ও মাহমুদুল্লাহ জুটিতে শতরানের কোটা পেরিয়ে যায় টাইগাররা। কিন্তু বাংলাদেশের স্কোর তিন অংকে পৌছানোর পরই থামতে হয় মাহমুদুল্লাহকে। সাব্বিরের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন মাহমুদুল্লাহ। ১৬ বলে ২১ রান করেন তিনি। সাব্বিরের সাথে ৩৬ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহ’র মত রান আউট হয়েছেন সাকিবও। ৭ বলে ৭ রান করেন টাইগার দলপতি। জুটিতে ২৯ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা। এর মধ্যে ২২ রানই ছিলো সাব্বিরের।
এরমধ্যেই টি-২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাব্বির। শেষ পর্যন্ত ৫০ বলে ৭৭ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ৭টি চার ও ৪টি ছক্ক ছিলো। শেষেরদিকে মেহেদি হাসান মিরাজের ৭ বলে অপরাজিত ১৯ রানে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করে বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষে চাহাল ৩টি উইকেট নেন।
শিরোপা জয়ের জন্য ১৬৭ রান করতে হবে ভারতকে। এমন লক্ষ্যে ভালো শুরু করেও তা ধরে রাখতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। দুই ওপেনার ১৬ বলে ৩২ রান এনে দেন দলকে। ধাওয়ানকে ১০ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সাকিব। এরপর শুন্য হাতে ফিরতে হয় তিন নম্বরে নামা সুরেশ রায়নাকে। উইকেটটি নেন রুবেল হোসেন।
৩২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ভারতকে সামনের দিকে টেনে নিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। ৩৬ বলে ৫১ রানের জুটি গড়েন তারা। এতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। তবে ১৫ রানের ব্যবধানে রাহুল ও রোহিতকে তুলে নিয়ে দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ।
২৪ রানে রাহুলকে শিকার করেন রুবেল। আর ৪২ বলে ৫৬ রান করা রোহিতকে বিদায় দেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। রোহিতের ইনিংসে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল।
রোহিত যখন ফিরেন তখন ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৪০ বলে ৬৯ রান দরকার ভারতের। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশ বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং-এ ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ভারত। কারন শেষ ১২ বলে ভারতের দরকার পড়ে ৩৪ রান। এমন অবস্থায় ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ।
কিন্তু নিজেদের ইনিংসের ১৯তম ওভারে বাংলাদেশের বোলার রুবেলের ছয় বল থেকে ২২ রান আদায় করে ভারতের উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক। এতে শেষ ওভারে ১২ রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের।
বল হাতে আক্রমনে আসেন বাংলাদেশের সৌম্য। নিজের করা প্রথম ২ ওভারে ২০ রান দিয়েছিলেন তিনি। শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে একটি ওয়াইডসহ ৩ রান দেন তিনি। তাই শেষ ৩ বলে ৯ রান প্রয়োজন পড়ে ভারতের। চতুর্থ বলে বাউন্ডারি আদায় করেন নেন ভারতের শঙ্কর। তবে পঞ্চম বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন তিনি। তাই শেষ বলে জিততে ৫ রান এবং ম্যাচ টাই করতে ৪ রান দরকার পড়ে ভারতের। সৌম্যর শেষ ডেলিভারিটি শুন্যে ভাসিয়ে সীমানা ছাড়া করে ভারতকে অবিস্মরনীয় জয় এনে দেন কার্তিক। ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮ বলে অপরাজিত ২৯ রান করেন কার্তিক। বাংলাদেশের রুবেল ২টি উইকেট নেন।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ক শারদুল ব চাহাল ১৫
লিটন ক রায়না ব সুন্দর ১১
সাব্বির বোল্ড ব উনাদকত ৭৭
সৌম্য ক ধাওয়ান ব চাহাল ১
মুশফিক ক শঙ্কর ব চাহাল ৯
মাহমুদুল্লাহ রান আউট ২১
সাকিব রান আউট ৭
মিরাজ অপরাজিত ১৯
রুবেল বোল্ড ব উনাদকট ০
মুস্তাফিজ অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-৪) ৬
মোট (৮ উইকেট, ২০ ওভার) ১৬৬
উইকেট পতন : ১/২৭ (লিটন), ২/২৭ (তামিম), ৩/৩৩ (সৌম্য), ৪/৬৮ (মুশফিকুর), ৫/১০৪ (মাহমুুদুল্লাহ), ৬/১৩৩ (সাকিব), ৭/১৪৭ (সাব্বির), ৮/১৪৮ (রুবেল)।
ভারত বোলিং :
উনাদকত : ৪-০-৩৩-২ (ও-২),
সুন্দর : ৪-০-২০-১,
চাহাল : ৪-০-১৮-৩,
ঠাকুর : ৪-০-৪৫-০ (ও-১),
শঙ্কর : ৪-০-৪৮-০ (ও-১)।
ভারত ইনিংস :
রোহিত ক মাহমুদুল্লাহ ব নাজমুল ৫৬
ধাওয়ান ক অতি (আরিফুল) ব সাকিব ১০
রায়না ক মুশফিকুর ব রুবেল ০
রাহুল ক সাব্বির ব রুবেল ২৪
পান্ডিয়া ক সাব্বির ব মুস্তাফিজ ২৮
শঙ্কর ক মিরাজ ব সৌম্য ১৭
কার্তিক অপরাজিত ২৯
সুন্দর অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-২, ও-২) ৪
মোট (৬ উইকেট, ২০ ওভার) ১৬৮
উইকেট পতন : ১/৩২ (ধাওয়ান), ২/৩২ (রায়না), ৩/৮৩ (রাহুল), ৪/৯৮ (রোহিত), ৫/১৩৩ (পান্ডিয়া), ৬/১৬২ (শঙ্কর)।
বাংলাদেশ বোলিং :
সাকিব : ৪-০-২৮-১,
মিরাজ : ১-০-১৭-০,
রুবেল : ৪-০-৩৫-২,
নাজমুল : ৪-০-৩২-১ (ও-১),
মুস্তাফিজুর : ৪-১-২১-১,
সৌম্য : ৩-০-৩৩-১ (ও-১)।
ফল : ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : দিনেশ কার্তিক (ভারত)।
সিরিজ সেরা : ওয়াশিংটন সুন্দর (ভারত)।