নেপালে বিমান দুর্ঘটার জন্য বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ি করেছে দেশটির গণমাধ্যম। গত সোমবার বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের ভুল বার্তায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ৭১ যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। এতে ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন ২০ জন।
কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (টিআইএ) অব্যবস্থাপনার কারণে এ ট্র্যাজেডি ঘটেছে বলে দাবি করেছে দেশটির ইংরেজি দৈনিক নেপালি টাইমস। পাইলট-এটিসি টাওয়ারের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডও প্রথমে প্রকাশ করেছে এ দৈনিক।
নেপালের এই দৈনিক বলছে, বিমানের কো-পাইলট প্রিথুলা রশিদ টিআইএ’র টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিকভাবেই করে যাচ্ছিলেন বলে মনে হয়। বিমানটিকে অবতরণের জন্য ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয় এবং রানওয়ের দক্ষিণপ্রান্তের ০২-তে অবতরণ করতে বলা হয়।
নেপালি টাইমস বলছে, এটিসি টাওয়ারের সঙ্গে পাইলট আবিদ সুলতানের কথোপকথন শুনে মনে হচ্ছে বিমানটিকে অবতরণের জন্য যে রানওয়ে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল তা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। রানওয়ে ০২ (দক্ষিণ) এবং ২০ (উত্তর) নিয়েই এ ভ্রান্তি।
এমনকি ড্যাস ৮ এর পাইলট যখন অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন অন্য পাইলটরা এটিসিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইউএস-বাংলার পাইলটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে, রাডারের সহায়তায় তাকে যেকোনো ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচানো উচিত।
ওই পাইলটরা বলেন, এটিসি থেকে ভিন্ন ভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেয়ায় ইউএস-বাংলার পাইলট কোথায় আছেন এবং কোথায় গিয়ে অবতরণ করবেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এক পর্যায়ে এটিসির এক কর্মকর্তা রূঢ় কণ্ঠে বলেন, আমি আবারো বলছি, রানওয়ে ২০’র দিকে যাবেন না।
পরে এটিসি পাইলটের কাছে জানতে চায়, তিনি রানওয়ে ০২ নাকি ২০-তে অবতরণ করতে চান। এবার পাইলট জানান, আমরা ২০ নাম্বার রানওয়েতে অবতরণ করতে চাই। তখন তাকে রানওয়ের শেষ প্রান্তে অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়।
পরে পাইলট আবার জানতে চান তিনি রানওয়ের নির্দিষ্ট এলাকায় আছেন কি-না। তখন তাকে না করে দেয়া হয়। এবার তাকে ডান দিকে সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এটিসি। পরে পাইলট ইতিবাচক সাড়া দেয়।
এ সময় পাইলট আবার বলেন, রানওয়ে ০২ অবতরণের জন্য ফ্রি (যদিও তিনি রানওয়ে ২০ -এ অবতরণের জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন)। তখন এটিসি থেকে তাকে রানওয়ে ০২- এ অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়। একই সময়ে সেনাবাহিনীর একটি বিমান বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল; এ বিমানও কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবতরণের সংকেত চায়। এ সময় এটিসি জানায়, বাংলাদেশি বিমান অবতরণের জন্য রানওয়ে ২০ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এ সময় পাইলট দুই নাম্বার রানওয়ে ফ্রি করার জন্য কন্ট্রোল রুমের কাছে অনুরোধ জানান। কিন্তু তাকে আবারো ভিন্ন বার্তা দেয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর পাইলট বলেন, স্যার আমি আবারো অনুরোধ করছি রানওয়ে ফ্রি করুন। ইউএস-বাংলার পাইলটের সঙ্গে এটিসির সর্বশেষ কথা অস্পষ্ট বোঝা যায়। তিনি বলেন, স্যার, আমরা কি অবতরণ করতে পারি? কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর এটিসির নিয়ন্ত্রক চিৎকার করে বলেন, আমি আবারো বলছি, বাঁক নিন…!
এরপর কিছুক্ষণ কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে টাওয়ারে আগুনের সংকেত আসে। যাতে পরিষ্কার হয় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় অপর একটি বিমানের পাইলট এটিসির কাছে জানতে চায়, রানওয়ে কী বন্ধ রয়েছে? এটিসি তখন নিশ্চিত করে জানায়, রানওয়ে বন্ধ রয়েছে। এর পরপরই বিমানটি বিকট শব্দ করতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই বিমানটি ত্রিভুবণ বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে আঁছড়ে পড়ে।
এটিসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ার পরও কেন তারা বিমানের পাইলটকে ভিজ্যুয়াল ফ্লাইট রুলস মানতে পরামর্শ দেয়নি। এছাড়া বিধ্বস্তের আগে বিমানটি টার্মিনাল ভবন, হ্যাঙ্গার, পার্ক করে রাখা বিমানের ওপর অত্যন্ত নিচুতে উড়তে থাকে। নেপালি টাইমস বলছে, রহস্যজনক ও অপরিমিত যোগাযোগের কারণেই এই ট্র্যাজেডি ডেকে এনেছে; যা ত্রিভুবন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।