শেষ ওভারে এসে শ্রীলঙ্কার পক্ষেই ছিলেন বোধয় আম্পায়ার । পরপর দুটি নিশ্চিত ওয়াইড বল যখন তার চোখ এড়িয়ে গেলো তখন এমনই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দমিয়ে রাখতে পারেনি টাইগারদের। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে মাহমুদুল্লাহর অসাধারণ এক ছক্কায় ২ উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ ও ভারত। ১৮ বলে ৪৩ রান করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
নিদাহাস ট্রফির অঘোষিত সেমিফাইনালে জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাটিং করছে ১৬০ রানের লক্ষ্য নিয়ে। বাঁচামরার এই লড়াইয়ে ব্যাট হাতে শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম চার ওভারের মধ্যে সাজঘরে ফিরেছেন লিটন দাস ও সাব্বির রহমান। দ্বিতীয় ওভারেই লিটন দাসের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ধনঞ্জয়। রানের খাতা না খুলেই ফিরে যেতে হয়েছে লিটনকে। নিজের পরের ওভারে সাব্বিরকেও স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেছেন ধনঞ্জয়।
তবে তৃতীয় উইকেটে ৬৪ উইকেটের জুটি গড়ে দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন তামিম ও মুশফিক। কিন্তু এই আশার আলো বেশিক্ষণ থাকেনি। পর পর দুই ওভারে দুজই ফিরে যান। এর পর সাজঘরে ফিরে সৌম্য সরকারও। তবে শেষপর্যায়ে চাপের মুখে ১৮ বলে ৪৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে শ্রীলঙ্কাও অবশ্য পড়েছিল ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে। মাত্র ৪১ রান সংগ্রহ করতেই হারিয়েছিল ৫টি উইকেট। শেষপর্যন্ত অবশ্য কুশল পেরেরার ৬১ ও থিসারা পেরেরার ৫৮ রানের ইনিংসে ভর করে স্কোরবোর্ডে ১৫৯ রানের লড়িয়ে পুঁজি জমা করেছে লঙ্কানরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ খেলছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে। ইনজুরি কাটিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই মাঠে ফিরেছেন বাংলাদেশী এই অলরাউন্ডার।
কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?
ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচটি কার্যত রূপ নিয়েছে সেমি-ফাইনালে। প্রথম ম্যাচ হেরে শুরু করা ভারত টানা তিন জয়ে ফাইনালে উঠে গেছে সবার আগে। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর শ্রীলঙ্কা হেরেছে টানা দুটি। দুটি হারের মাঝে একটি ম্যাচ দারুণভাবে জিতেছে বাংলাদেশ। শুক্রবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার লড়াইয়ে জয়ী দল খেলবে রোববারের ফাইনালে।
দুই দলের আগের লড়াইয়ে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২১৫ রান তাড়ায় জিতেছে ইতিহাস গড়ে। তবে সেই চূড়া থেকে পতন হয়েছে পরের ম্যাচেই। বুধবার ভারতের বিপক্ষে ১৭৭ রান তাড়ায় বাংলাদেশ হেরেছে ১৭ রানে।
শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর পাওয়া আত্মবিশ্বাসেও চোট লাগার কথা এই হারে। তবে কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ওই ম্যাচকে এত গুরুত্ব দিতেই রাজি নন। অন্তবর্তীকালীন কোচ দলকে উজ্জীবিত করছেন ভারতের বিপক্ষে হারকে পেছনে ফেলে।
ওয়ালশের বক্তব্য, ‘গতকাল জিততে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটাও আমাদেরকে ফাইনালের নিশ্চয়তা দিত না। এই ম্যাচ জিততেই হতো। সেভাবেই তৈরি হচ্ছি আমরা। চ্যালেঞ্জটা নিতে প্রস্তুত। ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই।’
‘যদি আমরা নিজেদের পরিকল্পনা মতো ও সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিতে খেলতে পারি, তাহলে অবশ্যই সুযোগ থাকবে। আজকের দিনটায় ছেলেরা রিল্যাক্সড ছিল। তরতাজা হয়ে সবাই কালকের লড়াইয়ে নামবে’, বলছিলেন তিনি।
টুর্নামেন্টের তিন ম্যাচে বাংলাদেশকে দেখা গেলে তিন রূপে। প্রথম ম্যাচে বিবর্ণ হার, দ্বিতীয় ম্যাচে অসাধারণ জয়। তৃতীয় ম্যাচটি দুটির মিশেল, ফলাফলে প্রাপ্তি যদিও হার। ফাইনালে ওঠার চ্যালেঞ্জে নিজেদের পারফরম্যান্স আরেকটু ধারাল দেখতে চান ওয়ালশ।
‘কালকের ম্যাচ কার্যত সেমি-ফাইনাল। দুই দলই জিততে চাইবে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমরা খারাপ খেলছি। স্রেফ প্রয়োজন নিজেদের একটু শাণিত করে তোলা। সেটুকু পারলেই ফাইনালে ওঠার সুযোগ থাকবে আমাদের। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’
ম্যাচের গুরুত্ব জানে শ্রীলঙ্কাও। জিততে না পারলে শুধু ফাইনালে ওঠার সুযোগই হাতছাড়া নয়, দেশের স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত টুর্নামেন্টও তাদের কাছে হয়ে পড়বে রঙহীন।
তবে চন্দিকা হাথুরুসিংহে মাঠের বাইরের হিসাব-নিকাশে মন দিতে চান না একটুও। দলকে চাপমুক্ত রাখতেই হয়তো লঙ্কান কোচ চেষ্টা করছেন প্রস্তুতিতে ম্যাচটিকে খুব বড় করে না দেখার।
হাতুরু বলেন, ‘অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। তবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি স্বাভাবিকভাবেই। ওদের বিপক্ষে সম্প্রতি আমরা অনেক খেলেছি, তাই ওদেরকে খুব ভালো করে জানি। ওরাও জানে আমাদের। ব্যাপারটা হলো দিনটায় কে ভালো খেলবে। আমরা আশাবাদী।’
গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচেও শ্রীলঙ্কা পাচ্ছে না দিনেশ চান্দিমালকে। মন্থর ওভাররেটের কারণে নিষিদ্ধ চান্দিমালের জায়গায় যথারীতি নেতৃত্ব দেবেন থিসারা পেরেরা। বাংলাদেশ ফিরে পেতে পারে নিয়মিত অধিনায়ককে। ম্যাচের আগের দিনই চোট কাটিয়ে এই অলরাউন্ডার যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত সাকিব খেললে সেটিও গড়ে দিতে পারে বড় পার্থক্য।
আগের রাতে ম্যাচ খেলার ক্লান্তি আছে। হারের মানসিক ধকল তো আছেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন তাই অনুশীলন করেনি বাংলাদেশ। এই অনুশীলন না করাটাও আসলে প্রস্তুতির অংশ। শ্রান্তিটুকু দূর করে, মানসিকভাবে আবার চাঙা হয়ে মাঠে নামতে চায় বাংলাদেশ। জিততে চায় ফাইনালে ওঠার চ্যালেঞ্জ।