সিলেট প্রতিনিধি :: ফিরে এলেন প্রিয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ১১ দিন পর অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ৩ মার্চ বিকেলে হামলায় আহত হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার পর বুধবার দুপুরে আবার নিজের ক্যাম্পাসে ফিরেন। এসময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
যে মুক্তমঞ্চে হামলার শিকার হয়েছিলেন জাফর ইকবাল, ক্যাম্পাসে ফিরে বুধবার বিকেলে সেই মঞ্চে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি। বিকেলে মুক্তমঞ্চে শিক্ষার্থীদের সাথে ‘সাদাসিধে কথা’য় মেতে উঠেন এই লেখক।
এসময় জাফর ইকবাল বলেন, আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। এই জীবনটাকে আমার কাজে লাগাতে হবে। কিভাবে কাজে লাগাতে পারবো তা চিন্তাভাবনা করে দেখতে হবে।
হামলার পর সারাদেশের মানুষের ক্ষোভ ও উদ্বেগ নিয়ে তিনি বলেন, আমি সবসময় ভাবতাম দেশের মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসে, তার প্রতিদান আমি কিভাবে দেবো। কিন্তু এখন আর তা ভাবি না। কারণ এই ঘটনার পর আমি বুঝে গেছি, এতো ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
হামলাকারীকে বিভ্রান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ নেই। তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু তাদের যারা বিভ্রান্ত করে তাদেরকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আর কোনো তরুণ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেদিকে সবাই নজর রাখতে হবে।
উগ্রবাদীদের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, আমার সম্পর্কে তোমাদের মনে যদি কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে থাকে তাহলে আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারো। আমি তোমাদের কথা শুনতে চাই। কেবল হাতের অস্ত্রটা ফেলে এসো।
তিনি বলেন, একজন মানুষের জীবন কত দুঃখের- কত কষ্টের হতে পারে, যার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো অন্যকে হত্যা করে বেহেস্তে যাওয়া। এই পৃথিবীটা যে খুবই সুন্দর তা তারা জানতেই পারলো না।
হামলাকারী ফয়জুরকে উদ্দেশ্য করে জাফর ইকবাল বলেন, তুমি কতো কষ্ট করছো। তুমি রিমান্ডে আছো। তোমার বাবা-মা ভাই রিমান্ডে আছে। এটা কী একটা জীবন হলো? অথচ তোমাদের যারা বিভ্রান্ত করে তারা আরাম আয়েশে আছে।
তিনি কোরান শরীফের আয়াত উল্লেখ করে বলেন- ”খোদা বলেছেন- ‘তুমি একজন মানুষকে হত্যা করেছো মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করেছো।’ এই আয়াত পড়ার পরও কেউ কিভাবে একজন মানুষকে হত্যা করে?”
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার জন্য আমার মন ছটফট করছিলো। আমি চেয়েছি হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পর আমার কণ্ঠ প্রথমে তোমরা শুনবে। তাই এখানে চলে এসেছি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জাফর ইকবাল বলেন, গতবছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র শিক্ষকদের উপর হাত তুলেছিলো। তাতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এরপর আমি সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। কেবল ভাবতাম- কখন অবসর হবে, এখান থেকে যেতে পারেবা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি নিষ্ঠুরের মতো আচরণ করেছি। তোমাদের ভালোবাসা দেখে আমি সেদিনের ঘটনা ভুলে গেছি। আমি আজ বলতে চাই- আমি তোমাদের সঙ্গে আছি তোমাদের সঙ্গে থাকবো।
এসময় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, জাফর ইকবালের স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকসহ শাবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন।
এরআগে দুপুরে একটি বেসরকারি বিমানে করে ঢাকা থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসসহ শিক্ষকরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।