চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বুদ্ধিজীবী চত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পশ্চিমে এই প্রথম নির্মিত হচ্ছে ‘চেতনা ৭১’ নামের একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক। ইতোমধ্যে স্মারকটির ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ভাস্কর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব জাহান প্রণীত নকশার ভাস্কর্যটি আগামী ২৬ মার্চ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
চবি সূত্রে জানা যায়, ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ এর আন্দোলন-সংগ্রামে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি রক্ষার জন্য যারা নিজেদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন, ইতিহাসের এসব দামাল শহীদদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অপরাজেয় বাংলা’, ‘স্বাধীন বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্ফুলিঙ্গ’, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গুচ্ছ ভাস্কর্য ’৭১ এর গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি’সহ বাংলাদেশের প্রায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বিভিন্ন স্পটে ভাস্কর্যের দেদীপ্যমান উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চবিতে স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও জাতীয় কোনো স্মারক তৈরি করা হয়নি। অবশেষে চবি প্রশাসন নির্মাণ করতে যাচ্ছে মুুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যটি। মূল বেদীসহ নির্মিতব্য ভাস্কর্যটির উচ্চতা হবে ১৮ ফুট, প্রস্থ ২২ ফুট। এর মধ্যে উপরের স্তরে দুই মুক্তিযোদ্ধার উচ্চতা হবে ১১ ফুট এবং নিচের স্তরে প্রতিটি মানব অবয়বের উচ্চতা ৫ ফুট। প্রকল্পটির নির্মাণে ব্যয় করা হবে ১৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে চবির নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ লক্ষ টাকা ও বাকি ১০ লক্ষ টাকা ব্যক্তি অনুদান।
ভাস্কর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই মূল ভাস্কর্যের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। লাইভ কাস্টিং মেথডে তৈরি করা হচ্ছে এ ভাস্কর্যটি। যা বাংলাদেশে প্রথম। ধূসর রঙের আস্তরণে মার্বেল ডাস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে রোদ বৃষ্টিতেও ভাস্কর্য মলিন হবে না। এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের প্রত্যক্ষ ও সমান অংশগ্রহণ বুঝানো হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের ভূমিকাও উপজাতি এক নারীর অবয়বে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
ভাস্কর্য নিমার্ণ কমিটির সদস্য সচিব চারুকলা ইনিস্টিটিউটের পরিচালক শায়লা শারমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য পাঁচজন ভাস্কর নকশা জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্য থেকে মূল্যায়ন কমিটি সোহরাবের নকশা অনুমোদন দেয়।’
প্রসঙ্গত, চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬ সালের নভেম্বরে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ‘আমরা চবিয়ান’ শীর্ষক ব্যানারে ৫২ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত স্বাধিকার আদায় ও স্বাধীনতা সংগ্রামে গণমানুষের অংশগ্রহণের স্মৃতিস্বরূপ ক্যাম্পাসে ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি তোলে।