আজ শনিবার খুলনা নগরের কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত দলীয় জনসভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। শনিবার নগরের শহীদ হাদিস পার্কে সভা করার অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু সেখানে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সব ধরনের মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)।
পরে দুপুর ১২টায় খুলনা নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এইমাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার অনুমতি দিয়েছেন। এরপর মঞ্চ তৈরি করে বেলা আড়াইটায় জনসভা শুরু হয়। বিভিন্ন জেলা ও নগরের বিভিন্ন থানা থেকে নেতা-কর্মীরা স্লোগান নিয়ে জনসভায় উপস্থিত হন।
জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সংগ্রামের সূচনা শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নয়। এই সংগ্রামের সূচনা হলো বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির জন্য। এই সংগ্রাম হলো মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, আমাদের ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গিয়েছিলাম, সেখানে তিনি মলিন মুখে ছিলেন না; ছিলেন একজন তেজস্বী হিসেবে। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, শক্ত হোন, ঐক্যবদ্ধ হোন। এই সংগ্রাম হচ্ছে আমাদের বাঁচা–মরার সংগ্রাম। এই সংগ্রামে জয়ী হতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। নয় বছর এরশাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, খালেদা জিয়াকে ন্যূনতম আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কারণ ভয়! এই ভয় কিসের? খালেদা জিয়া যদি মাঠে নামেন, তাহলে এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে শুধু এই দেশ থেকে নয়, উপমহাদেশ থেকে চলে যেতে হবে। সেই কারণে বিএনপিকে এত ভয়।
বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, এই সরকার গায়ের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য তারা যা ইচ্ছে তা–ই করছে। গত কয়েক বছরে বিএনপির বহু নেতা-কর্মীকে খুন করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কেন জনগণের প্রতিপক্ষ হচ্ছেন? জনগণ আপনাদের প্রতিপক্ষ মনে করে না। জনগণের প্রতিপক্ষ তো আওয়ামী লীগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের নেত্রী কারাগারে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অভিযোগ, আমরা নাকি নাশকতার পরিকল্পনা করি।’ কারও নাম উল্লেখ না করে ফখরুল বলেন, ‘নাশকতার পরিকল্পনা করছেন তো আপনি। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করছেন। এ জন্য আপনাকেও একদিন কারাগারে যেতে হবে।’
নেতা-কর্মীদের সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান ফখরুল।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আজ আওয়ামী লীগ রাজনীতির জোরে নয় প্রশাসনের জোরে টিকে আছে। আজ দেশে গণতন্ত্র নেই। আর মেগা প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে সরকার।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, বরকতুল্লাহ বুলু, খুলনার মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
এর আগে সকাল থেকে এই জনসভা ঘিরে নগরে উৎকণ্ঠা ছিল। বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, খুলনা সদর থানা মোড়ে ও হেলাতলা মোড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রেখেছে পুলিশ। বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি জলকামান ও পুলিশের সাঁজোয়া যানও ছিল। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ধীরে ধীরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এ ছাড়া নগরের প্রবেশপথ এবং বিভিন্ন মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ে।