বুধবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
এরপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সাতই মার্চ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করে। আজ বেলা দুইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল আমাদের নয়, বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। একটি ভাষণ কীভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আসুন সকলে মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সাতই মার্চে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মানুষ হাজির হয়েছিলেন মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নিরাশ করেননি তাঁদের। জনসমুদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটের যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ইতিহাস হয়ে আছে।
এবার সাতই মার্চ জাতির সামনে অন্য মহিমায় হাজির হয়েছে। গত বছর অক্টোবরে ইউনেসকো সাতই মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ জন্য আওয়ামী লীগ ১ মার্চ থেকে সারা দেশে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন আজ নানা আয়োজন নিয়ে দিবসটি পালন করছে।
সাতই মার্চের বিশাল জনসমাবেশে দেওয়া ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
আসন্ন যুদ্ধপ্রস্তুতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।’
প্রকৃতপক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার আহ্বানের অধীর অপেক্ষায় ছিল বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্লোগান ছিল ময়দানজুড়ে ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’।