আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা এক অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও ধরখার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ সিরাজুল ইসলাম মনুর সভাপতিত্ব করা নিয়ে যখন গুঞ্জন শুরু হয়, তখন হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন সিরাজুল ইসলাম নিজেই। সভাপতির বক্তব্যে তিনি আগামী নির্বাচনে ধরখার ইউনিয়ন থেকে আনিসুল হককে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে এসে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। সরাসরি আওয়ামী লীগে যোগ না দিলেও ভেতরে ভেতরে তিনি তাদের বিভিন্ন আয়োজনে সহযোগিতা করেন। তা ছাড়া দলীয় কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলা, পদত্যাগ, গ্রেপ্তার আতঙ্কসহ বিভিন্ন কারণে ‘টালমাটাল’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা বিএনপি। অনেকেই এখন এলাকার বাইরে অবস্থান করছে। পদবিধারী অনেক নেতাকেও এখন দলের কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না। এসব কারণে মাঝেমধ্যে একেবারে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি। এ অবস্থায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক প্রকার হতাশাও নেমে এসেছে। এসব নিয়ে সরাসরি দলের কেউ কিছু না বললেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন রকমের কৌশলী স্ট্যাটাস দিচ্ছে।
এদিকে কসবা-আখাউড়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে এক প্রকার হতাশা বিরাজ করছে। বিএনপির এই দুঃসময়েও তিনি পরিবারের সঙ্গে কানাডায় অবস্থান করছেন বলে সমালোচনা তুঙ্গে। উপজেলার নেতাকর্মীরা মূলত মুশফিকুর রহমানের ওপর নির্ভর করেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাছির উদ্দিন হাজারী এখন মাঝেমধ্যে এলাকায় সময় দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন। এলাকায় তাঁর নামে ব্যানার-ফেস্টুনও রয়েছে। যদিও আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের কৃষক দলের ওই নেতার কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না। মুশফিকুর রহমান ও নাছির উদ্দিন হাজারীকে কেন্দ্র করে বিএনপির ভেতরে মূলত দুটি বলয় গড়ে উঠেছে।
এদিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন কারণেই এখন অনেকে বিএনপির রাজনীতি থেকে পিছিয়ে পড়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে পরে জামিনে ছাড়া পাওয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হেলাল চৌধুরী এরই মধ্যে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সোলায়মান ইসমাইল রুমেল। উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি শামীমুর রহমান শিশিরও পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপি থেকে নির্বাচিত পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরও দলের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত আছেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ভেতরে ভেতরে তাঁরা সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। যেকোনো সময় তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
এসব ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মুনসুর মিশন বলেন, ‘বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে পুলিশ। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির আটজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব কারণে অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শেখ সিরাজুল ইসলাম পাঁচ-ছয় বছর ধরেই বিএনপির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বিএনপির কোনো পদেও নেই। হেলাল চৌধুরী ও সোলায়মান ইসমাইল রুমেল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তাঁদের কমিটিগুলো নতুনভাবে করা হয়েছে।’