সরকারের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধন হচ্ছে অভিযোগ করে এই উদ্যোগ থেকে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ দাবি জানিয়ে বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচনে (নির্বাচন পূর্ব সময়) ডিজিটাল প্রচারণার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান যুক্ত করে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধন চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আবারো একটি ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকারি প্রেসক্রিপশনে এগুচ্ছে তারা। যা অবাধ, সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায়।
রাজধানীর নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিজিটাল প্রচারণার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিধানযুক্ত করে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধনের নামে একটা নতুন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে কালো আইন তৈরির উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি কারসাজি আড়াল করতে অবাধ তথ্যপ্রবাহের হাত-পা কেটে ফেলা। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায় এমন কালাকানুন থেকে সরে আসার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিসহ পরবর্তিতে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, ওইসব নির্বাচনে কিভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, রক্তাক্ত ভোট সন্ত্রাস, বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মনোনয়নপত্র জমা দানে বাঁধা দেয়া হয়েছে, কিভাবে সারাদেশে ভোট সন্ত্রাস হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যাতে মানুষের কাছে প্রকাশ না পায়, ভোট কেন্দ্রে ভোটার শূণ্য অবলা প্রাণী মার্কার নির্বাচন যাতে দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে না পারে সেজন্যই আওয়ামী লীগ প্রধানের নির্দেশে এই নতুন আইন করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, আমরা বর্তমান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়ার পর থেকে বলে আসছি তিনি সরকারের সবুজ সংকেত ছাড়া কোনো কাজ করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর এজেন্ডা বাস্তবায়নই তার প্রধান কাজ। সংলাপের সময়ে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ওপর সবাই গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু বর্তমান ইসি সেসব মতামতকে উপেক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে সেনা বাহিনীর নাম বাদি দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সিইসির নেতৃত্বে আবারো একটি নীল নকশা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মহাপরিকল্পনা হচ্ছে যে, নির্বাচন হবে একচেটিয়া ও একতরফা এবং তা হবে প্রধানমন্ত্রী ও তার দলকে বিনা ভোটে জেতানোর নির্বাচন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখতে পরিকল্পিতভাকে একটি বানোয়াট ও জাল নথি বানিয়ে মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করাসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাজা দেয়া হয়েছে। আধিপত্য-অভিলাষী সরকার গাণিতিক হিসাবে বিএনপিকে দমন করার কাজ চালাচ্ছে। খালেদা জিয়ার জামিন কিভাবে বাধাগ্রস্ত করা যায় তা নিয়েও সরকার ষড়যন্ত্র করছে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে, হামলা করা হচ্ছে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে। অন্যদিকে নির্বাচনী তফশীল ঘোষষণা ছাড়াই সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি খরচে সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। যা নির্বাচনে সমতল মাঠ নির্মানে সহায়ক নয়। নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব নির্বাচনের সমতল মাঠ তৈরি করা।