ঢাকা: লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দুই দফা গোপন বৈঠক করেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের একটি হোটেলে সাদেক হোসেন খোকার বৈঠক হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থাসহ সাংগঠনিক নানা বিষয়ে উভয় নেতা খোলামেলা আলোচনা করেন। প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে বিগত ওয়ান-ইলেভেনসহ বিভিন্ন সময়ের দুই নেতার নানা তিক্ত সম্পর্কের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আজ লন্ডন থেকে সাদেক হোসেন খোকার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ২৬ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তিনি ক্যান্সারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেখান থেকে গত ২২ নভেম্বর সন্ধ্যায় লন্ডনে যান সাদেক হোসেন খোকা। সেখানে এসে তারেক রহমানের জন্মদিনের কেক কাটাসহ যুক্তরাজ্য বিএনপির কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
জানা গেছে, তারেক-খোকার দুই দফা গোপন বৈঠক নিয়ে বিএনপিতে নানা আলোচনা চলছে। অনেকটা গোপনীয়তা রক্ষা করেই সাদেক হোসেন খোকা লন্ডনে আসেন। দুই দফা বৈঠকও হয় অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের কর্মী কিংবা স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের অগোচরেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে অবশ্য তারেক রহমানের জন্মদিনের কেক কাটা অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই অংশ নেন।
খোকার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, দুই দফা বৈঠকই ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ। দুই নেতা পরস্পর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। রাতে একসঙ্গে দুই নেতা ডিনারও করেন। দুই দফা বৈঠকের দুই দিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে দলে নানা আলোচনা হয়। নেতা-কর্মীরা বলছেন, এর মাধ্যমে তারেক রহমানের সঙ্গে খোকার তিক্ত সম্পর্কের বরফ গলছে।
সূত্র জানায়, প্রায় কাছাকাছি সময়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম। ওই সময় বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী লন্ডনে থাকলেও তারেকের সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর থেকেই খোকা লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু প্রথম দিকে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের প্রায় ছয় মাস হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই লন্ডনে আসেন তিনি। রাজনৈতিক আশ্রয়ে না থাকায় ২৬ নভেম্বর ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই নিউইয়র্ক ছাড়েন বিএনপির এই নেতা। জানা গেছে, তারেক-খোকার বৈঠকে বেশ উল্লসিত খোকাপন্থিরা।
অন্যদিকে মন খারাপ খোকাবিরোধীদের। তারা প্রথম দফার বৈঠককে অস্বীকারও করেন। তবে দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে চুপ, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি তারা। তবে এ নিয়ে বিএনপিতে চলছে নানা আলোচনা। এ প্রসঙ্গে খোকাপন্থি এক নেতা বলেন, তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে দলের একজন সিনিয়র নেতার দেখা-সাক্ষাৎ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে খুশি বা অখুশি হওয়ার কিছু নেই। তার প্রশ্ন, এটাকে গোপন বৈঠকইবা বলা হচ্ছে কেন? – ঢাকাটাইমস