আবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দীর্ঘ দিনের ও ঘনিষ্ঠতম সহকারী হোক হিকস পদত্যাগ করছেন। তিনি ছিলেন হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর। হোয়াইট হাউস বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে সিএনএন জানিয়েছে।
গত কয়েক বছরে হোপের উল্কার বেগে উত্থান হয়েছিল। অবশ্য তিনি তার অবস্থানকে বেশ লো-প্রফাইলে রাখতেন।
তার বিদায়ে বেশ সমস্যায় পড়বেন ট্রাম্প। ট্রাম্প তার উপস্থিতিতে কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলেন।
হাইস ইন্টিলিজেন্স কমিটির সামনে সাক্ষ্য প্রদানের এক দিন পর তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তিনি দায়িত্ব পালন কালে কারো ক্ষতি হবে না- এমন মিথ্যা কথা বলেন। তবে ঠিক এ কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সাবেক সিনিয়র সহকর্মী বব পোর্টারের এক কেলেঙ্কারির সাথেও জড়িত ছিলেন হোপ হিকস। রবও পদত্যাগ করেছেন।
বুধবার পদত্যাগের ঘোষণাকালে হোপ কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, তিনি সবসময় ট্রাম্পের কল্যাণ চেয়েছেন।
গোয়েন্দা ব্রিফিং পাওয়ার অনুমতি হারালেন ট্রাম্পজামাতা কুশনার
রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জ্যারেড কুশনার যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গোয়েন্দা ব্রিফিং ‘প্রেসিডেন্টস ডেইলি ব্রিফ’ পাওয়ার অনুমতি হারিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যে প্রবেশের েেত্র হোয়াইট হাউজ কঠোর শৃঙ্খলা আরোপের পর কুশনার অনুমতি হারান বলে এ বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা মঙ্গলবার জানিয়েছেন।
বছরখানেক ধরে অস্থায়ী নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কুশনার। তবে গত কয়েক সপ্তাহ থেকে প্রেসিডেন্টের ডেইলি ব্রিফ পাচ্ছেন না বলেও সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রসেনসস্টেইন সম্প্রতি হোয়াইট হাউজের কাউন্সিল ডন ম্যাকগেনকে উপদেষ্টা কুশনারের ঝুলে থাকা নিরাপত্তা ছাড়পত্রের বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন।
কুশনার সম্পর্কে কী ধরনের তথ্য হোয়াইট হাউজের কাছে এসেছে তা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে এ কারণে ট্রাম্পজামাতার পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ছাড়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া ধারণার চেয়েও ধীরগতির কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
৩৭ বছর বয়সী কুশনার ফের শীর্ষ এ গোয়েন্দা ব্র্রিফিং পাওয়ার অনুমতি পাবেন কি না, পেলেও কবে নাগাদ, তা জানা যায়নি। বিস্তৃত ব্যবসায়িক সংযোগের কারণে হোয়াইট হাউজের দায়িত্বে বসার পর বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ছাড়পত্র পাননি ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কার স্বামী এ ধনী ব্যবসায়ী। কুশনার নিরাপত্তা ছাড়পত্রের আবেদনে (এসএফ এইটিসিক্স নামে পরিচিত) বেশ কয়েক দফা সংশোধনও করেছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।
প্রেসিডেন্টের ডেইলি ব্রিফে প্রবেশের অনুমতি হারানোর বিষয়ে কুশনারের হোয়াইট হাউজ মুখপাত্রের পক্ষ থেকে তাৎণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা উচ্চৈঃস্বরে ট্রাম্পের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও প্রেসিডেন্ট তা এড়িয়ে যান।
পরে কুশনারের আইনজীবী আবে লোয়েল এক বিবৃতিতে জানান, নিরাপত্তা ছাড়পত্রের প্রক্রিয়ায় যতটুকু করবেন বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল কুশনার তার চেয়েও বেশি করেছেন। লোয়েল বলেন, ‘আমার অনুসন্ধান নিশ্চিত করেছে, কুশনারের পর্যায়ের ডজনেরও বেশি ব্যক্তির নিরাপত্তা ছাড়পত্রের প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। নতুন একটি প্রশাসনের জন্য এ ধরনের বিষয়ে দীর্ঘ সময় লাগার ব্যাপার অস্বাভাবিক নয়; এখন এ ত্রুটিগুলো চিহ্নিত হয়েছে। কুশনারের আবেদনের ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ উত্থাপিত হয়নি।’
সাবেক দুই স্ত্রীর পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অস্থায়ী নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিয়ে বছরখানেক ধরে হোয়াইট হাউজের স্টাফ সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন রব পোর্টার, চলতি মাসে এ তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র ইস্যু নিয়ে চাপে আছে হোয়াইট হাউজ।
অভিযোগ সত্ত্বেও পোর্টার নিজেকে নিষ্পাপ দাবি করে আসছেন।
প্রেসিডেন্টের ডেইলি ব্রিফ মার্কিন প্রশাসনের খুবই অল্পসংখ্যক শীর্ষ কর্মকর্তাকে দেয়া হয়। এই ব্রিফিংয়ে উচ্চ মাত্রার গোপনীয় গোয়েন্দা বিশ্লেষণ, বিশ্বজুড়ে চালানো সিআইএ’র গোপন অভিযান, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে স্পর্শকাতর উৎসগুলোর অথবা মিত্র গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শেয়ার করা প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত থাকে।
নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিয়ে হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ জন কেলির নতুন ব্যবস্থাপনার কারণে কুশনারকে সংবেদনশীল গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। লোয়েল দাবি করেছেন, ‘এরপরও প্রেসিডেন্ট তাকে যেসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন তা চালিয়ে যেতে কুশনারের সমস্যা হবে না’।
কুশনারের আইনজীবী এ দাবি করলেও প্রেসিডেন্টের ডেইলি ব্রিফ ছাড়া ট্র্রাম্পজামাতার পে চীন ও রাশিয়াবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণে আগের মতো ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিচুক্তি করতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকারি কর্মসূচির সংখ্যা কমানো ও আধুনিকীকরণের দায়িত্বও কুশনারের। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের সরকারি কর্মকর্তার সাথে ট্রাম্পজামাতার যোগাযোগ হোয়াইট হাউজের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পোর্টারের নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিয়ে চরম সমালোচিত কেলি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশে গত বছরের ১ জুন কিংবা এর আগে থেকে অস্থায়ী ছাড়পত্র নিয়ে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়া সবার কাজ সপ্তাহখানেকের মধ্যে বন্ধ করার ঘোষণা দেন। এরপরই কুশনারের সাথে চিফ অব স্টাফের উত্তেজনা বাড়ে বলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র দাবি করেছে।
কুশনারের নিরাপত্তা ছাড়পত্রের বিষয়টি সমাধান হয়েছে কি না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সারাহ বলেন, ‘তিনি আমাদের দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। প্রশাসনে প্রথম থেকে তিনি যেসব কাজ শুরু করেছেন তা এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন।’ হোয়াইট হাউজে অস্থায়ী নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তাদের ব্যাপারে উদ্বেগ এসেছে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটরদের কাছ থেকেও। সরকারি কাজ এবং গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য ও নথিতে অস্থায়ী ছাড়পত্র পাওয়া কর্মকর্তাদের প্রবেশাধিকার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য তাদের।