সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইচ্ছা থাকলে একটি সরকার দেশের উন্নয়ন করতে পারে আমরা তা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। আমরা প্রমাণ করেছি ও বারবার অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছি যে দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তেই আমরা রাজনীতি করি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আগামী মার্চে বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে। বাঙালি জাতি বীরের জাতি, আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। তাই আমরা নিম্ন বা মধ্যম নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবোই।
আজ মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনীত প্রস্তাবের ওপর সরকার ও বিরোধী দলের মোট ২৩৬ জন সংসদ সদস্য সর্বমোট ৬৪ ঘণ্টা আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ধন্যবাদ প্রস্তাবটি সংসদে সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন সংসদে যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হতো, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি অত্যন্ত গঠনমূলক সমালোচনা করছেন। গণতান্ত্রিক চর্চাটা কীভাবে হতে পারে তা এই সংসদে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, টানা দুই মেয়াদে ধারাবাহিকভাবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। আমরা রাজনীতি করে জনগণের কল্যাণে ও তাদের উন্নয়নের জন্য। জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করেই রাজনীতি করি, একটাই লক্ষ্য দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি দেওয়া।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দেশের জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ১৯টা ক্যু হয়েছে, কীভাবে দেশের অগ্রযাত্রা হতে পারে? বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মর্যাদায় আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারতো। ইচ্ছা থাকলে যে একটি দেশের উন্নয়ন করা যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ এটা ঘোষণা দিয়েছিলাম। এটা আমরা করেছি। অগ্রগতির উন্নয়ন সূচকে বিশ্বের ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশের ক্রয় ক্ষমতায় দিক থেকে সারা বিশ্বে ৩২তম স্থানে রয়েছি।
সরকারের সফলতা ও অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার কারণেই প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মাথা পিছু আয় বিএনপি আমলে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। আজকে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে। এই হার ১৪-১৫ এর মধ্যে যাতে নামতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়েছি। মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। মুল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিট থেকে ৫ ভাগে নেমে এনেছি। অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী। রপ্তানি আয় ৩৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। রিজার্ভ এখন ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমরা দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছি। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ে উন্নীত হয়েছে। গত ৯ বছরে ৫২ লাখেরও বেশি মানুষ বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুতের জন্য দেশে হাহাকার ছিল। বিএনপির আমলে দিনে ৫/৬ ঘন্টা লোডশেডিং ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার। বর্তমান সরকার ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে এলএমজি আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছি। মেট্রোরেল নির্মাণ করছি।
যানজট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে। যার একটি গাড়ি ব্যবহারের ক্ষমতা ছিল না, তারা এখন দুইটা কিনছে। সবাই আইন মানলে যানজট অনেক কমে যেত। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি ও অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছি যে দুর্নীতি করতে নয়, জনগণের ভাগ্য গড়তে আমরা রাজনীতি করি।
কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ প্রভাইডারদের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের মাধ্যমে চলছে, তাই প্রকল্পে যারা কাজ করছেন তাদের জাতীয়করণ করা সম্ভব নয়। যারা থাকতে চান না তারা চলে যেতে পারেন, অন্য জায়গায় চাকরি নিয়ে যেতে পারেন। তাই প্রকল্পটি চলছিল, আগামীতেও চলবে। সেবা খাতকে মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, এই নীতি আমরা অনুসরণ করেছি। সর্বত্র নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছি। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। পৃথিবীর কোন দেশ এক ধাপে এতো বেতন কেউ বৃদ্ধি করতে পারেনি। প্রতি বছর উৎসব ভাতাও দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই, অশান্তি চাই না। কিন্তু কেউ আমাদের আক্রমণ করলে তা মোকাবেলা করতে পারি সেজন্য সশস্ত্র বাহিনীকে ত্রিমাত্রিকভাবে গড়ে তুলেছি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সমমর্যাদা নিয়ে চলতে চাই। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া কেউই স্থল সীমানার সমাধান করতে পারেনি, আমরাই করেছি। উৎসবমুখর পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করে বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, আমরা করেছি। রায়ও কার্যকর করেছি। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করেছি। কিন্তু বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তার দাবিদাররা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের সঙ্গে বিনিময় করেছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস-মাদকের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আমরা কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছি। দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাই, সবাই যেন তাদের ছেলে-মেয়েরা কোথায় যায়, কী করে, মাদকাসক্তে আসক্তি হচ্ছে কি না, তা যেন দেখেন। সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন। সন্তানরা যেন বাবা-মায়ের কাছে মন খুলে কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ গড়ে তুলুন। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়েছি। যতদিন তারা নিজ মাটিতে ফিরে না যায় ততদিন যাতে একটু ভালভাবে থাকে সেই ব্যবস্থা করেছি। ১০ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গাদের আইডি কার্ড করে দিয়েছি, এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু তাদের সঙ্গে যে আচরণ মিয়ানমার করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে, বিনিয়োগের কোনো অভাব নেই। বিনিয়োগ যাতে দ্রুত হয়, সেজন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার চালু করছি। কৃষি জমি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি।