বহু প্রতিক্ষিত ছিটমহল সমস্যার সমাধানের ’আনুষ্ঠানিক ঘোষণা’ দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে ছিটমহল অধ্যুষিত কোচবিহার জেলার দিনহাটায় নয়ারহাটের সরকারি অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে মমতা বলেন ’ছিটমহল নিয়ে রাজ্য সরকারের সম্মতির কথা এই মঞ্চ থেকেই আজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলো। আমরা চাই ছিটমহল সমস্যার সমাধান হোক। দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক অতিতেও ভালো ছিল আগামীতেও ভালো থাকবে।
মমতার ওই সভার ভারতের ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি ছিটমহলের কয়েক হাজার বাসিন্দাও উপস্থিত ছিলেন। মমতার এই ঘোষণা শুনে তারা তেমন উচ্ছাস হননি। কেননা তারা অনেকেই জেনে গেছেন ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ছিটমহল চুক্তি বিষয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছে। মমতার আপত্তি থাকলেও দেশের স্বার্থে এই সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করত মোদি সরকার।
ওই সরকারি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারের ঢালাও উন্নয়নের কথাও বলেন। দুটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ডাক দেন মমতা। রাজ্যের মুখ্যসচিব ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষসহ অন্যান্য নেতা।
এদিকে মমতার এই ঘোষণাকে বাষ্পীয় বলে দাবি মনে করছে বিজেপি। একই সঙ্গে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের তরফেও মমতার এই অবস্থান বদলকে সুবিধাবাদী রাজনীতি বলেও কটাক্ষ করা হচ্ছে।
বিজেপির শীর্ষ নেতা ও রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা কালের কণ্ঠকে বলেন বাংলাদেশে আগুন লাগানোর জন্য মমতা দেবী যা করার সবটাই করেছেন। এখন বুঝতে পেরেছেন মোদির সরকার প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে এবং অবশ্যই ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে ছিটমহল চুক্তি সম্পাদন করবেন। তখন বাধ্য হয়েই ছিটমহলের মানুষের সামনে এই নাটক করলেন। এতে কোনো লাভ হবে না। দেশের মানুষ নয় শুধুই প্রতিবেশী দেশের মানুষও জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সম্মতির কোনো মূল্য নেই।
রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর মতে কংগ্রেস সরকারই এই সমস্যা সমাধান করে গিয়েছে। এটা শুধুই এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষা। আর এই মহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সুর বদল করার নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
বামফ্রন্ট নেতা বিমান বসু জানান ছিটমহলসহ তিস্তা চুক্তি নিয়ে বামফ্রন্ট দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চান না বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল থাকুক। তিনিই সম্পর্ক নষ্ট করেছেন। ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন হোক সেটি বামফ্রন্ট স্বাগত জানায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাংবাদিক অমিত বসু কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৭৪-এ ইন্দিরা গান্ধী আর শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল। চুক্তিতে ছিটমহলগুলো যেমন বিনিময়ের কথা ছিল সেই রকম মেঘালয়, আসাম ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের অপদখলীয় ভূমির বিনিময় হওয়ার কথা ছিল। জোট সরকারের নানা রকম বাধ্যবাধ্যকতায় ভারতের লোকসভায় সংবিধান সংশোধন করতে পারেনি প্রায় সব সরকার। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক আগেই এই চুক্তি পাস হয়ে গিয়েছিল।
এদিকে ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত কালের কণ্ঠকে জানান, এই ধরনের একটি ঘোষণা আমরা আশা করেছিলাম। দেরিতে হলেও মুখ্যমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। এতে দীর্ঘ দিনের এই সমস্যা সমাধান হবে।