ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের মন্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা করেছে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। তার মন্তব্যকে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে একে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করা হয়েছে।
গত বুধবার নয়াদিল্লিতে আয়োজিত এক সেমিনারে জেনারেল বিপিন রাওয়াত অভিযোগ করে বলেন, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে লোক অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তান ও চীনের মদদ।
‘দ্য হিন্দু’র সম্পাদকীয়তে এ প্রসঙ্গে বলা হয়, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি যেসব দেশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হয়েছে, তার মধ্যে ভারত তার সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে সফল হয়েছে। জনমিতির বিপর্যয় ও বাংলাদেশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘পরিকল্পিত অভিবাসনের’ বিষয়ে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত যে মন্তব্য করেছেন, তা যেকোনো বিচারেই অস্বাভাবিক। ভারতীয় সেনাপ্রধানদের েেত্র অনেক দিনের একটি ঐতিহ্য ছিল যে, তাঁরা জনসমে মন্তব্যের সময় রাজনৈতিক বিষয় থেকে দূরে থাকতেন। কিন্তু দিল্লিতে হওয়া সেমিনারে জেনারেল রাওয়াত রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন, ধর্মীয় পরিচয় ও জনসংখ্যার বিন্যাস এবং ভারতের সাথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী অবস্থান থেকে সেনাপ্রধানের এমন সরে আসা নজিরবিহীন।
এর আগে জম্মু ও কাশ্মিরের স্কুলের অবস্থান নিয়ে বিপিন রাওয়াত রাজনৈতিক মন্তব্য করেছিলেন জানিয়ে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যদি ভালো উদ্দেশ্যেও এসব মন্তব্য করা হয়ে থাকে, তবে তা অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কিছু করছে না। রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি এগিয়ে নিতে কোনো ভূমিকা রাখছে না।
‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘জওয়াহেরলাল নেহরুর ভারত সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক মতা ও উচ্চাশা হইতে দূরে রাখিতে পারিয়াছিল। নরেন্দ্র মোদির ভারত কি নেহরু যুগের সেই অভিজ্ঞানটিকেও মুছিয়া দিতে তৎপর?’
জেনারেল বিপিন রাওয়াতের এহেন মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিশ্চুপ থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে।
সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়ার’ সম্পাদকীয়তে। এতে বলা হয়েছে, ‘এটি ছিল পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়। একজন দায়িত্বরত সেনাপ্রধান হিসেবে জনসমে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করা থেকে দূরে থাকা রাওয়াতের কর্তব্য। রাওয়াতের শব্দচয়ন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে যেন এআইইউডিএফ চীন-পাকিস্তানের প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে। আবার অভিবাসনের প্রাথমিক কারণ হয় অর্থনৈতিক। কিন্তু সেনাপ্রধানের বক্তব্যে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের পেছনে কোনো-না-কোনোভাবে চীন বা পাকিস্তান জড়িত।’ ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ তাদের সম্পাদকীয়র শিরোনাম দিয়েছে ‘লাইন অব কন্ট্রোল’। এতে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধানের মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বিরক্তিকর।
জেনারেল বিপিন রাওয়াতের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কের সাম্যাবস্থা নষ্ট করতে পারে।