গাড়ি চুরির পর অনলাইনভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয়ের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও দৈনিক পত্রিকায় সেই গাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আর এ ক্ষেত্রে গাড়ি বিক্রি গ্রহণযোগ্য করতে চেসিস নম্বর পরিবর্তন করে জাল পে-অর্ডার এবং বিআরটিএর কাগজপত্রও তৈরি করা হয়। কোনো ব্যক্তি ওই গাড়ি কিনতে চাইলে এসব জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে চোরাই গাড়ি বিক্রি করে প্রতারকচক্র।
তাই অনলাইনভিত্তিক কেনাবাচার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু কেনার আগে কাগজপত্র যাচাই করে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায়।
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বেলা সাড়ে ১২টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষ্ণপদ রায় এ অনুরোধ জানান।
তিনি জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি চোরাই প্রাইভেটকার, বিআরটিএর জাল কাগজপত্র, সিল ও বিভিন্ন ব্যাংকের পে-অর্ডারসহ গাড়ি চুরিতে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরা হলেন ইকবাল হোসেন, মো. জাবেদ, মুশরেকিন আহমেদ রাব্বি, আলী হোসেন ও মো. মহসিন।
কৃষ্ণপদ রায় আরো জানান, গত ১ ডিসেম্বর বসুন্ধরা ও ইস্টার্ন প্লাজা এলাকা থেকে গাড়িচোর ও ছিনতাইকারী দলের নেতা ইকবাল হোসেনসহ জাবেদ ও মুশরেকিন আহাম্মেদ রাব্বিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুর পাইকপাড়া ও বাংলামোটর লিংক রোড এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি প্রাইভেটকার । পরে বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নীলক্ষেত এলাকা থেকে আলী হোসেন ও মহসিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ইকবাল ও জাবেদ গাড়ি চুরি করেন। জাল চেসিস নম্বর প্রতিস্থাপন করেন জাবেদ । রাব্বি ওই চোড়াই গাড়ির রং পরিবর্তন ও নকল কাগজপত্র তৈরি করেন। এরপর বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইনভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয়ের সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দিয়ে চোরাই গাড়ি বিক্রি করে থাকেন। আলী হোসেন ও মহসিন জাল পে-অর্ডার ও বিআরটিএর জাল কাগজপত্র ছাপার কাজও করেন।
এ চক্র পে-অর্ডারের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিআরটিএ-তে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। তা ছাড়া বিভিন্ন টেন্ডারের কাজে ও বড় রকমের লেনদেনে নকল পে-অর্ডার ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন।
ইকবালকে গাড়িচোর চক্রের মূল হোতা আখ্যায়িত করে উপকমিশনার বলেন,‘ ইকবাল ও রাব্বি ইতিপূর্বে একাধিকবার চোরাই গাড়িসহ ডিবি ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এরা জামিনে বের হয়ে আবার গাড়ি চুরিতে জড়িয়ে পড়েন। ইকবালের বিরুদ্ধে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ৯টি গাড়ি চুরি এবং ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে। রাব্বির বিরুদ্ধে চারটি গাড়ি চুরি ও প্রতারণার মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘অনলাইনকে ব্যবহার করে গাড়ি চুরির পর তা বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন গ্রেফতারকৃতরা।গাড়ি চুরি করে নিজেরা চেসিস নম্বর বদলে ফেলতেন। তা ছাড়া দামি গাড়ি রাখার জন্য তারা বিভিন্ন এপার্টমেন্টে গ্যারেজ ভাড়াও নিতেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
তাই, অনলাইনে যেকোনো পণ্য কেনাবেচার সময় গ্রাহকদের পণ্যের কাগজপত্র যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শও দেন কৃষ্ণপদ রায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘শুল্ক বিভাগের কেউ এই গাড়িচোর চক্রের সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।