রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
‘‘অনেকবার কইছিলাম সার আমারে মজিবর রাস্তা ঘাটে ঝালায়। আমি অহন প্রত্যেক দিন ই¯ু‹লে আসবার পারি না। তারা আমার কথা হেুানে না। শেষ মেষ রোববার সহালে আমারে মাইনষের সামনে রাস্তায় জড়াইয়া ধইরা হুমানে চরথাপ্তর মারতে থাহে’’ এভাবেই নিজের প্রতি হওয়া অবিচারের কথা গুলো বলছিল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬’ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী (১২)।
সে আরো জানায়, ধামলই উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো.আব্দুল মান্নানের ছেলে মো.মজিবর রহমান (২৫) তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসার পথে বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করতে থাকে বখাটে মজিবর। এ বিষয়ে সে একাধিকবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.ফরিদ আলম ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো.আব্দুল বাতেন হাওলাদারের কাছে অভিযোগ জানায়। কিন্তু বখাটে মজিবর এলাকার প্রভাবশালী ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের ছেলে দেখে এমন হাজারও অন্যায় দেখেও না দেখার মত বান করে থাকে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি মো.খলিল ফকির জানান, বিদ্যালয়ের মেয়েদের উত্যক্ত করার অপরাধে প্রায় পাঁচ বছর আগে মজিবরকে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করে দেয়। এরপর থেকে নেশা শুরু করে সমাজের বিভিন্ন খারাপ কাজের সাথে লিপ্ত। তার থাবায় পড়েছে এই এলাকার অটোরিকশা চালকের মেধাবী ওই ছাত্রী। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানোর পর যদি, সঠিক প্রদক্ষেপ নিতো তাহলে আজ এ দিন দেখতে হতো না মেয়েটির। এর কঠিন বিচার দাবি জানায় সে।
জানা যায়, গত রবিবার সকালে ধামলই উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের কাছ থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে লাঞ্জিত করে মজিবর। এসময় নিজেকে বাঁচাতে সড়কের পাশের ধান ক্ষেতে লাফ দেয় স্কুল ছাত্রী। কাঁদামাটিতে স্কুল ড্রেসসহ বই ও খাতাপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে বখাটে মজিবর। এর সঠিক বিচারের দাবিতে গতকাল সোমবার সকালে বিদ্যালয়ের মাঠে বিক্ষোভ করে ছাত্রীর অভিভাবকসহ স্থানীয় শতাধিক লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে ওই ছাত্রীর স্কুলে আসা যাওয়া বন্ধ করেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো.আব্দুল বাতেন হাওলাদার জানায়, তিনি এ বিষয়ে আগে কোন দিন অভিযোগ পাননি। তবে গত রবিবার ঘটনা জানতে পেরে ছেলে বাবাকে ডেকে ছিলেন।
শ্রীপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ছাত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনার মামলা হয়েছে। তদন্ত পূর্বক যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পলাতক আসামীকে গ্রেফপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আকতার জানান, ঘটনাটি শুনে তাৎক্ষণিক পুলিশকে এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের অবহেলা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।