বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণের পর বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে রাজপথ দখলে রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেই লক্ষ্যে সিরিজ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন দলটি। এর অংশ হিসেবে মার্চে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। আজ রোববার দলের যৌথ সভায় এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের পর বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল সরকারকে চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। দলীয় প্রধান কারাগারে অন্তরীণের পরও সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারমুখী অবস্থানে না দেখে খানিকটা হতাশও হয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। উল্টো, বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে জনসমর্থন এবং নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন সরকারের কর্তারা।
বিএনপি ব্যর্থ হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে- সরকারের নেতা-মন্ত্রিরা এমন মন্তব্য করলেও তলে তলে বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত তারা। এ অবস্থায় বিএনপিকে দমন নাকি কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়া হবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে সরকার।
তবে নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়া হলে তারা জনগণের আরো বেশি সহানুভূতি পাবে। যা আগামী নির্বাচনে সরকারের জন্য নেতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারে। অন্য দিকে, এভাবে একের পর এক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়া হলে এক সময় জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এটিও সরকারের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। ফলে বিএনপির ব্যাপারে সরকারের কৌশল কী হতে পারে তা নিয়ে বেশ বিশ্লেষণ চলছে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে আপাতত রাজনীতির ফাঁকা মাঠে ছেড়ে না দিয়ে আওয়ামী লীগও মাঠে আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। তারই অংশ হিসেবে আগামী মাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে মাসজুড়েই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীনেরা।
সেই লক্ষ্যে আজ দলের যৌথসভা ডাকা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ধানমন্ডি প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, সব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, রাজধানীর আশপাশের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ওইসব জেলার সরকারদলীয় এমপিরা উপস্থিত থাকবেন। সভায় সভাপতিত্বে করবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সভায় খালেদা জিয়ার রায় ও বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে বিশদ আলোচনা হতে পারে। একই সাথে বিএনপির আন্দোলন এবং নির্বাচন সামনে রেখে নানা কর্মসূচির সিদ্ধান্ত আসতে পারে এই সভায়। ৭ মার্চ উপলক্ষে ইতোমধ্যেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার সিদ্ধান্ত রয়েছে। জনসভায় বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য দলের পক্ষ থেকে সভায় কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে।
সূত্রগুলো আরো জানায়, মার্চ মাসকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখতে দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনকে দিয়ে পর্যায়ক্রমে সিরিজ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে থাকবে মূল দলের কর্মসূচি। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে দলের বিভিন্ন উপকমিটির ব্যানারে সভা-সেমিনার অব্যাহত থাকবে। আজ বেলা ১১টায় আইন উপকমিটির উদ্যোগে একটি সেমিনার হওয়ার কথা রয়েছে। এভাবে একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা।