মৌলবিদের পর এবার বিজেপি নেতার রোষের মুখে ভারতের দক্ষিণী সিনেমা শিল্পের নবাগতা অভিনেত্রী প্রিয়া ভারিয়ের। তাঁর ভাইরাল গান নিষিদ্ধ করার দাবি তুললেন বিজেপি নেতা সঞ্জীব মিশ্র। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, অবিলম্বে ‘ওরু আদার লাভ’ সিনেমার জনপ্রিয় গানের ভিডিও ‘মাণিক্য মালারায়া পুভি’ কে নিষিদ্ধ করুক কেন্দ্র।
মধ্যপ্রদেশের হোসঙ্গাবাদের বিজেপির খেল প্রকোষ্ঠের জেলা সংযোজক সঞ্জীব মিশ্রর দাবি কিন্তু বেশ বিস্ফোরক। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘যুবকদের উদ্দেশে বলছি, ওই নায়িকাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ফলো’ না করে বরং পাকোড়া বিক্রি করুন। যে দেশে শুধুমাত্র চোখ মারলে কারো ফলোয়ার্স লাখ লাখ ছাড়িয়ে যায়, সে দেশের যুবকদের পাকোড়াই বিক্রি করা উচিত।’
কিন্তু কী এমন রয়েছে এই গানের ভিডিওতে? প্রিয়ার নিষ্পাপ চাহনি, ভুরুতে কটাক্ষের ঢেউ ও মুখে স্মিত হাসির বিরুদ্ধে কেন সরব বিজেপি?
অভিযোগকারীর দাবি, এখন পরীক্ষার মরশুম চলছে। আর প্রিয়ার এই গান শিক্ষার্থীদের মনঃসংযোগ নষ্ট করছে। তাঁরা পড়শোনা ছেড়ে ইন্টারনেটে বেশিক্ষণ সময় কাটাচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে দেশের ভবিষ্যতের ক্ষতি হচ্ছে। আর তাই সঞ্জীব চান, প্রিয়ার এই গানের ভিডিও অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হোক।
গত শুক্রবার মালায়লাম সিনেমা ‘ওরু আদার লাভ’ এর প্রোমো গান ‘মানিক্য মালারায়ি পুভি’ রিলিজ হওয়ার পরপরই ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। আর গানটির একটি দৃশ্যে চোখ মেরে দর্শকের হৃদয়ছোঁয়া কিশোরী অভিনেত্রী প্রিয়া প্রকাশ ভারিয়ার রাতারাতি মহা তারকা বনে যান।
এরপর গত মঙ্গলবার নাটকীয়ভাবে গানটির বিরুদ্ধে হায়দ্রাবাদ পুলিশে অভিযোগ করেন মুসলিমদের একটি গ্রুপ। তাদের অভিযোগ গানটিতে মুসলিমদের চেতনায় আঘাত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে গানটিতে।
বৃহস্পতিবার দারুল ইফতা জামিয়া নিজামিয়া নামে ভারতের একটি ইসলামি সংগঠন এই গানের বিরুদ্ধে ফতোয়াও জারি করেছে। সংগঠনের তরফে মুখপাত্র জাহির খান জানিয়েছেন, এই গানের কথা মুসলিম ভাবাবেগে আঘাত করছে।
বুধবার উত্তর ভারতের বিখ্যাত ইসলামি প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ মাদ্রাসার উলেমারাও এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। দেওবন্দ মাওলানা, সলিম আশরাফ কাসমি বলেন, ‘হোক কোনো অভিনেতা, ক্রিকেটার বা অন্য কোনো ব্যক্তি, ভারতের সংবিধান কাউকে কোনো ধর্মকে বাজেভাবে উপস্থাপনের অধিকার দেয়নি। আর সরকারের দায়িত্ব হলো কোনো ধর্মকে বাজে উপস্থাপনের কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমরা এই অভিনেতার ঘৃণ্য অভিনয়ের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। যা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করছে।’
আর এবার শিক্ষার্থীদের মনঃসংযোগ নষ্ট করার অভিযোগ করলেন বিজেপি নেতা।
কিন্তু এত সব অভিযোগে অবশ্য কান দিতে নারাজ শিক্ষিত, যুব সম্প্রদায়ের একাংশ। মৌলবি বা কট্টরপন্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিও এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করছে। ২০১৮-র এখনও পর্যন্ত জনপ্রিয়তম গান এটি।
রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়াতে লাখ লাখ মিম তৈরি হয়ে গিয়েছে গানটি নিয়ে। সেই মিম-এ কে নেই? নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী-সকলেই নাকি প্রিয়ার চাহনিতে কাৎ। এমনকি মেরুভাল্লুকও নাকি মজেছে প্রিয়ার প্রেমে। মজার ছলে এমনটাই জানান দিচ্ছে গুচ্ছের মিম।
শুধু ভারতেই নয়, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানেও আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন প্রিয়া।