উত্তর-পূর্ব ভারতের কমিউনিস্ট শাসিত ত্রিপুরা রাজ্যে নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের হার বাড়ছে। তবে এখনো তাঁরা পুরুষদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। নির্বাচন দপ্তরের প্রকাশিত তথ্যই তা প্রমাণিত।
১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ৬০ সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভার ৫৯টি আসনে ভোট। ভোটপ্রার্থী ২৯৬। তাঁদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৩। অর্থাৎ প্রায় ৮ শতাংশ নারী এবার প্রার্থী। ২০১৩-তে ১৫ জন নারী প্রার্থী ছিলেন। মোট প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪৯। মোট প্রার্থীর মধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন ৬ শতাংশ। গতবার জয়ী হন ৫ জন। এবার কতজন জয়ী হন, সেটা ৩ মার্চ গণনার দিন জানা যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ধনপুর কেন্দ্র থেকে। তাঁকে হারাতে যুযুধান কংগ্রেস ও বিজেপি দুই দলই ভরসা রেখেছে নারীদের ওপরই।
ত্রিপুরায় বর্তমান মন্ত্রী পরিষদের সদস্যসংখ্যা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারসহ ১২। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১ জন নারী। আগের মন্ত্রিসভাতেও একজন নারীকেই শুধু সুযোগ দেওয়া হয়।
তবে দেশের একাধিক রাজ্যের মতো ত্রিপুরাতেও স্থানীয় স্তরে পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্ধেক আসনই নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ত্রিপুরার শাসক দল সিপিএম বহুদিন ধরে দাবি তুলছে, দেশের সংসদ ও বিধানসভাতেও ৩৩ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে।
তবে ভোটে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়েছে। ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ নারীই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৯০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এবারের ভোটার তালিকায় প্রতি হাজারে ৯৭১ জন নারী। অর্থাৎ লিঙ্গবৈষম্যে ভোটার হিসেবে নারীরা ত্রিপুরায় খুব একটা পিছিয়ে নেই।
রাজ্যে মোট ৩ হাজার ২১৪টি ভোট গ্রহণকেন্দ্র থাকছে ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৩ জন ভোটারের জন্য। এর মধ্যে ৪৭টি পুরোপুরি নারীদের দ্বারা পরিচালিত হবে।
তবে ত্রিপুরা রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কোনো দলই নারীদের সমানাধিকার দিতে চায় না। এ বিষয়ে সিপিএমের ঘোষিত অবস্থান, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আইন করুক। বহু বছর ধরে বামেরাই দাবি জানিয়ে আসছে। আইন হলেই সিপিএমসহ বাম দলগুলো সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থী দেবে।’
প্রায় তিন দশক ধরে নারীদের জন্য জাতীয় সংসদ ও অঙ্গ রাজ্যগুলোর বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের দাবি উঠছে। ২০০৮-এ রাজ্যসভায় বিল পাস হলেও লোকসভায় বিলটি আটকে যায়। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নারীদের আসন সংরক্ষণ তাই আজও অধরা ভারতে।