তিন দিনের মালয়েশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
এর আগে স্থানীয় সময় ১১টা ৫৫ মিনিটে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন তিনি।
বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-মন্ত্রী হাজি ইসমাইল হাজি আবদুল মুত্তালিব। বিদায়েও শেখ হাসিনাকে দেখানো হয় লাল গালিচার সম্মান।
এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন, যাতে তারা দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হন।
তাদের উপস্থিতিতেই বুধবার জনশক্তি রপ্তানি, ভিসা প্রক্রিয়া শিথিল এবং পর্যটন ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি, দুটি সমঝোতা স্মারক ও একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৭৩ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়া সফরে যান, তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাজিব রাজাকের বাবা আব্দুল রাজাক হুসেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর উত্তরসূরি হাসিনা ও নাজিব বর্তমানে দেশ দুটির সরকার প্রধানের দায়িত্বে।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক, এটাকে আমরা গ্রেটার হাইটস-এ নিয়ে যেতে চাই’।
“আমাদের দুই দেশের মধ্যে কোনো ধরনের ইরিটেশন নেই। এটা গ্রেটার হাইটসে যাবে, এটা দিয়েই উনি (রাজাক) ওপেন করেছেন।”
মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে প্রায় তিন লাখসহ ছয় লাখের মতো বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। বুধবার স্বাক্ষরিত প্রটোকলের আওতায় দেশটির সারাওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার বাংলাদেশির কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৬০ হাজারে উন্নীত হবে।
যারা অবৈধভাবে সেখানে রয়েছেন, তাদের বিষয়টি ‘দেখার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
দুই দেশের বাণিজ্যের পাল্লা মালয়েশিয়ার দিকে ভারী। বাংলাদেশে প্রতি বছর মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য কেনে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় যায় সাড়ে ১৩ কোটি ডলারের পণ্য। এই বাণিজ্য ঘাটতিও কমিয়ে আনার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি জানান, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য গঠিত যৌথ কমিশনের বৈঠক ২০০৫ এর পর আর হয়নি। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া আবার তা আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ যাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের ‘ডায়ালগ পার্টনার’ হতে পারে, সেজন্য সমর্থন দিতেও রাজি হয়েছেন মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান। আগামী বছর মালয়েশিয়াই আসিয়ানের চেয়ারম্যান হবে।
মঙ্গলবার কুয়ালালামপুর পৌঁছনোর পর বাংলাদেশে হাইকমিশন আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। পরে হোটেলে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এস স্যামি ভেলুর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বুধবার সকালে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত একটি সংলাপে বক্তব্য দেওয়ার পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য পুত্রাজায়ায় যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
পুত্রাজায়ার পারদানা স্কয়ারে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান নাজিব রাজাক।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সেখানে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়, একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়।
প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুই প্রধানমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে পারদানা মিটিং রুমে হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক।
রাতে মালয়েশিয়ার সরকার প্রধানের দেওয়া একটি নৈশভোজেও অংশ নেন শেখ হাসিনা। তার বোন শেখ রেহানাও এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।