রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বব্যাপী চিরন্তন ভালবাসা প্রকাশের দিন ১৪ ফেব্রয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এ দিনটি খুব কাক্সিক্ষত। অনেকেই বছরের শুরুতেই ডায়েরির পাতায় বিশেষ ভাবে চিহিৃত করে রাখে এ দিনটি। প্রেমিক প্রেমিকাকে, প্রেমিকা প্রেমিককে বিশেষ কোন উপহার দিতে ভুলে না। ভালবাসার দিনটিতে সাজ এখন আর একই ঢংয়ে সীমাবদ্ধ নেই। যেমন ফুল শুধু খোঁপার জন্য নয়, চুলের নানা রকম স্টাইলের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ফুল ও ফুলের মালা ব্যবহার করা হচ্ছে হাতে, কপালে, হাতে। ভালোবাসার রঙ আকাশে বাতাসে। কাক ডাকা ভোর থেকেই শুরু হয়ে যায় ভালোবাসার রঙের ছড়াছড়ি। খুব দ্রুত বাহাড়ী রঙের পোশাক পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে ভালোবাসার মানুষ। মনের মানুষের সাথে মিলে ছুটে যান বিভিন্ন পার্ক, রির্সোট ও প্রকৃতির মাঝে।
এরই ধারাবাহিকতায় ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এশিয়ার সর্ববৃহত পার্কটিতে সকাল থেকেই দুরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের পথচারনায় মূখর হয়ে উঠে। দিন যত দৌড়ে পালাচ্ছে তেমনিই ভাবে তার সাথে পাল্লা দিয়ে দর্শনার্থীরাও পার্কে থাকা বিভিন্ন রাইড,প্রকৃতি লোকেশন পরিদর্শন শেষ করার জন্য ঘুরছেন। পার্কে আছে (ড্রাই পার্ক),(প্রজাপতি গোহা),(মাছের রাজ্য), (সিংহ ও বাঘের অরণ্য),(কুমিড়ের জলাধর),(বাচ্চাদের জন্য বিশেষ শিশু ড্রাই পার্ক)সহ শতাধিক এমন ড্রাই পার্ক ও প্রকৃতির বিশাল সার্মাজ্য। আজ ভালোবাসা দিবস থাকায় তরুন তরুনীদের ঢল নেমেছে পার্কে। পার্কে ছোট বড় সকলের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। দল বেধে বন্ধু বান্ধব মিলেও এসেছে তরুনরা।
নবদম্পতি ময়মনসিংহ থেকে আসা রাজিব ও সুমি প্রতিবেদকের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তারা জানান, গত মাসেই বিয়ে হয়েছে তাদের। রাজিব একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত। তার স্ত্রী সুমি একজন গৃহীনি। বিয়ের পর থেকেই তারা কিছু সময় সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে কাটানোর চিন্তা করেন। কিন্তু কর্ম ব্যবস্তার জন্য হয়ে উঠেনি। তবে রাজিব মনে মনে ভেবে রেখে ছিলেন ভালোবাসা দিবসে শত ব্যবস্তা রেখেই প্রিয় বউটিকে নিয়ে ঘুরবেন। আজ তারা ঘুরাঘুরিই করেন। শপথ নিয়েছেন জীবনের আগামী বছর গুলোতেও যেন তাদের সম্পর্ক এমন মধূর থাকে। তবে ভালোবাসার তেমন সোঝাসাপ্টা উত্তর দিতে পারলেন না তারা। ভালোবাসার অর্থ খোঁজতে তরুণ দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলেন এই প্রতিনিধি। ভালোবাসা এই শব্দটি কত কবির কলমে ফুটে ওঠেছে মূর্ত হয়ে। ‘ভালোবাসা’ আবার অনেকের জীবনে অধরাই থেকে গেছে অচিন পাখি হয়ে। যার জীবনে ভালোবাসা নিয়ে এসেছে সফল পরিণতি, তার কাছে ভালোবাসা বসস্তের কোনো ফুল বাগানের মতই রঙিন। আবার কারো কারো জীবনে ভালোবাসা বিবর্ণ, ধূসর, শুধুই দুঃখের স্মৃতি। আসলে ভালোবাসার রং কী? এ বিষয়ে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন উত্তর।
সাফারি পার্কে আসা মানিক গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আসমা কাছে ভালোবাসা রং লাল। তার মতে, লাল আনন্দের রং। আর ভালোবাসা তো আনন্দেরই বিষয়, সোজাসাপ্টা উত্তর আসমার।
আবার ভাওয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের শিক্ষার্থী ইতি কাছে ভালোবাসার রং নীল। তার কাছে নীল রং প্রতিনিধিত্ব করে বিশাল আকাশের।
তবে ঘুরতে আশা চিকিৎসক শফিকুল ইসলামের কাছে ভালোবাসার রং সাদা। তিনি জানান, সাদার শুভ্রতাই ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
এদিকে প্রকৌশলী রিতা কাছে ভালোবাসার রং গোলাপি। সুমা বলেন, ‘আমার কাছে গোলাপি খুবই মিষ্টি রং। ভালোবাসাও গোলাপির মতই মিষ্টি।’
তবে ভালোবাসাকে রংধনুর সাত রঙের সঙ্গে তুলনা করলেন ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী। তার কাছে ভালোবাসা রংধনুর মতই বর্ণিল।
রেজার ভাষায়, ভালোবাসার রক্তক্ষরণে জীবন হয়ে ওঠতে পারে রক্তিম। ভালোবাসা জীবনকে যখন আরও রঙিন করে তোলে তখন জীবনের রং হয়ে ওঠে কমলা। কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবাসা যখন মানুষকে হাসাতে পারে তখন জীবনের রং হয়ে ওঠে হলুদ। ভালোবাসা যখন অমর, তখন এর রং সবুজ। ভালোবাসা যখন আকাশের মত বিশালতার অনুভূতি দেয় তখন এর রং নীল। ভালোবাসা যখন বসস্তের মত সজীবতা আনে জীবনে, তখন এর রং আসমানী। আর ভালোবাসা যখন ফুলের মত সৌন্দর্য আনে জীবনে তখন এর রং বেগুনি। সব মিলিয়ে ভালোবাসা হল- রংধনুর সাত রঙের সমষ্টি।
তবে ভালোবাসার রং যাই হোক, জীবনকে রঙিন করে তুলতে ভালোবাসা অতুলনীয়। আজ সারাদিন ভালোবাসার খোঁজে সাফারি পার্কে আসা দর্শনার্থীদের সাথে কথোপকথনে এসব মনের অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।