লিওনেল মেসি না ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো- ফুটবল বিশ্ব শাসন করা এই দুই তারকার শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে একেক জনের মত একেক রকম। এমনিতেই সারা বছর চলে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা, এখন যখন আরো একবার ফিফা ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ের সেরা তিনে জায়গা করে নিয়েছেন দুজন, তখন তো আলোচনার ঝড়টা আরো তীব্র হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে শেষ পর্যন্ত কী অপেক্ষা করছে সেটা সময়ের হাতে থাকলেও খেলোয়াড় মেসি যে রোনালদোর চেয়ে ভালো সেটা পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিলেন রোনালদিনহো। সাবেক ব্রাজিলিয়ান প্লেমেকারের কাছে রোনালদো ‘পরিপূর্ণ খেলোয়াড়’ আর মেসি হলেন ‘জাদুকর’, যে জাদুতে মোহিত গোটা ফুটবল বিশ্ব।
সতীর্থ হিসেবে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি মেসিকে। এমনকি মেসির উত্থানটাও তাঁর চোখের সমানেই। তাই বলে সাবেক বার্সেলোনা তারকার মনে রোনালদোর দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। পর্তুগিজ যুবরাজকেও প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছেন রোনালদিনহো। তবে দুজনের তুলনার ব্যাপারে বিশ্বকাপজয়ী তারকা এগিয়ে রেখেছেন মেসিকে। একটি পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলেছেন, ‘ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো পরিপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে মেসি রোনালদোর চেয়ে ভালো, কারণ সে হলো জাদুকর।’ আর্জেন্টাইন অধিনায়কের বার্সেলোনার মূল দলের অনুশীলনে যোগ দেওয়ার স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি, ‘আমরা খেলোয়াড়রা সবাই ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডকে (কোচ) বলেছিলাম মেসিকে মূল দলের অনুশীলনে নিয়ে আসার জন্য।’
২০০৩ সালে প্যারিস সেন্ত জার্মেই থেকে রোনালদিনহো যোগ দিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। যদিও ওই সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়াটা মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি ওই সাক্ষাৎকারে। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে সান্দ্রো রসেলের সঙ্গে আলোচনা করে যোগ দেন ন্যু ক্যাম্পে। তাঁর বক্তব্য, “সব কিছু দ্রুত ও সুন্দরভাবে হয়েছিল। বার্সেলোনা বোর্ডে আমার খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলেন; সান্দ্রো রসেল। প্রস্তাবটা আসার পর তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি বার্সেলোনায় যোগ দিতে আগ্রহী কি না। ওই সময়ই তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, উত্তরে বলেছিলাম ‘হ্যাঁ’।” ম্যানইউ বাদ দিয়ে কাতালান ক্লাবটি বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রায় চলেই গিয়েছিলাম। তবে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে জেতার পর রসেল আমাকে ফোন করেছিলেন। আসলে আমি বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছিলাম। চুক্তি করার পর মোটেও চাপে ছিলাম না, বরং উপভোগই করছিলাম। আমি সুযোগটা পেয়েছিলাম, যেটা সব খেলোয়াড়ই চায় বার্সেলোনায় হয়ে খেলতে।’ তাই তো আদর্শ রোমারিও, রিভালদো ও রোনালদোর মতো বার্সেলোনায় খেলতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন সাবেক বিশ্বসেরা এই ফুটবলার।
২০১৪ সালের ব্যালন ডি’অর কার হাতে উঠছে, এ ব্যাপারে রোনালদিনহো মন্তব্য করেননি কোন। তবে জুভেন্টাস গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন বেছে নিয়েছেন রোনালদোকেই। গত মৌসুমের পারফরম্যান্সের বিচারে মেসির চেয়ে পর্তুগিজ তারকাকে পুরস্কারটির জন্য যোগ্য মনে করছেন তিনি। ফিফা ডটকমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ জয়ী ইতালিয়ান গোলরক্ষকের যুক্তি ‘সম্ভবত রোনালদো জিতবে। এমনকি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতলেও, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের জন্য তার পুরস্কার পাওয়া উচিত। রোনালদো অনেক দিন ধরে তাঁর পারফরম্যান্সের ধারাটা সচল রেখেছে। গত দুই বছর ও অসাধারণ সময় কাটাচ্ছে। অবশ্যই এর যোগ্য স্বীকৃতি পাওয়া উচিত তার।’ যদিও মেসির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন নেই তাঁর মনে, ‘আমি এটাও মনে করি সব কিছু মিলিয়ে মেসি এখনো সেরা। তবে রোনালদো এই বছরটা দারুণ কাটিয়েছে।’