চোখের রোদচশমাটা না থাকলে কি বোঝা যেত তাঁর অভিব্যক্তি? টেস্ট-ওয়ানডেতে এভাবে ‘বাতিল’ হয়ে যাওয়ার পরের যন্ত্রণা? কাল মিরপুর স্টেডিয়ামের অনুশীলনে সৌম্য সরকার সত্যিই যেন ‘কালো কাচের’ ওপারে আটকে রাখতে চাইলেন নিজেকে! শরীরী ভাষায় তবু কিছু বোঝা যায়! অনুশীলনের মাঝে যেন চিরকালীন হাস্যোজ্জ্বল সৌম্যের চেয়েও চোয়ালবদ্ধ এক ব্যাটসম্যানকে খুঁজে পাওয়া যায় বেশি করে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে টেস্ট-ওয়ানডেতে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন সৌম্য। তবে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ফিরেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সৌম্য নিজেও জানতেন সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে তাঁকে ফেরানো হবে। হাথুরুসিংহের বিদায়ের সমান্তরালে টেস্ট-ওয়ানডে দলে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া সৌম্য সেই আত্মবিশ্বাসের খোঁজ পেলেন কোথায়, টি-টোয়েন্টি বলেই কি? সৌম্য অবশ্য সেটা মনে করেন না মোটেও। ব্যাট হাতে যেখানেই তিনি নামেন না কেন, আত্মবিশ্বাস আর স্ট্রোক খেলার দুঃসাহস তাঁর সঙ্গী। সাফল্য-ব্যর্থতার মানদণ্ডে আত্মবিশ্বাসকে মাপার পক্ষেও নন এই বাঁহাতি, ‘যেভাবেই খেলি আর যতটুকুই থাকি না কেন উইকেটে, আত্মবিশ্বাস নিয়েই ব্যাট করি। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেভাবে খেলেছিলাম, সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এখানেও ব্যাট করতে চাই।’
দলের বাইরে থাকার সময়টাতে প্রিমিয়ার লিগে মনোযোগী হয়েছিলেন। আর সেই সময়ে পূরণ করার চেষ্টা করেছেন নিজের ঘাটতিগুলো, যার বড় একটা অংশজুড়েই ছিল ফিটনেস, ‘আলাদা করে কিছু ফিটনেস আর ড্রিলের কাজ করেছি। আমার আগের কোচ, ক্লাব কোচের সাথে। রুশো স্যারের (বিকেএসপির কোচ) সাথে সামনাসামনি কথা হয়নি, তবে ফোনে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাইম ব্যাংকের কোচ আশিক ভাইয়ের সাথেও কিছু কাজ করা হয়েছে।’
ফিরে এলেন সৌম্য, কিন্তু যখন এলেন সেই সময়টায় হতাশ হাওয়ায় টালমাটাল ড্রেসিংরুম। কান পাতলে গভীরে মন খারাপের একটা ক্ষীণ সুর পাওয়া যায়। পরস্পর বিচ্ছিন্ন এক ‘অসুখী’ পরিবার, যা বাইরের মানুষের কাছে প্রকাশযোগ্য নয়। এমন অবস্থায় উত্তেজনার টি-টোয়েন্টিতে ধুন্ধুমার লড়াইটা তবে হবে কী করে? সৌম্য অবশ্য ফেলে আসা দুঃসময়কে সঙ্গে টেনে নিয়ে বেড়াতে চান না, ‘টি-টোয়েন্টিতে এসে যদি ওয়ানডে-টেস্টের কথা চিন্তা করি, তবে অবশ্যই প্রভাব থাকবে। আর যদি চিন্তা করেন নতুন ফরম্যাট, অধিকাংশ ক্রিকেটার যারা দলে এসেছে, তারা ওয়ানডে-টেস্ট খেলেনি। আমার মনে হয় না তাদের মাথায় ওয়ানডে-টেস্ট নিয়ে চিন্তা থাকবে। আমার বিশ্বাস ভালো কিছুই হবে। অল্প ওভারের খেলা। আমরা যদি আমাদের সব বিভাগে ভালো করতে পারি, তবে ফল আমাদের পক্ষেই আসবে, অল্প ওভারে মাঠের পারফরম্যান্স যাদের যত ভালো থাকবে ফলও তাদের পক্ষেই যাবে।’
এই ফেরার মাঝেই কি টেস্ট-ওয়ানডেতে ফেরার পথ খুঁজছেন সৌম্য? ‘না’-সোজাসাপটা উত্তর এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের, ‘এখন দুটি টি-টোয়েন্টি সামনে, চেষ্টা করব এই দুটো খেলায় ভালো করে অন্তত টি-টোয়েন্টিতে নিজেকে নিয়মিত করার।’ মুখে ‘না’ বললেও, ফেরার এই আশাটা হয়তো থেকে যায় সব সময়ই, টি-টোয়েন্টির ব্যাপারেও যেমন ছিল সৌম্য সরকারের!