বিশ্বের সেরা বিষধর সাপ

বিচিত্র

snackসাপ নিয়ে আমাদের যতটা না কৌতূহল, তার চেয়ে বেশি ভয়। পৃথিবীতে বছরে প্রায় এক লাখ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। প্রায় ৬০০ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে বিশ্বে। লিখেছেন সোহানুর রহমান অনন্ত

বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ পৃথিবীময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিশেষ করে এন্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই জলে-স্থলে কম-বেশি সাপের বসবাস রয়েছে। অন্যান্য প্রাণী থেকে সাপ কিছুটা ভিন্ন স্থান দখল করে আছে তাদের বিষের কারণে। ছোট থেকে শুরু করে বড় যে রকম সাপই হোক না কেন, প্রচণ্ড সাহসী মানুষকে ভয় পাইয়ে দিতে পারে এক মুহূর্তে। সাপ নিয়ে আমাদের যতটা না কৌতূহল, তার চেয়ে বেশি ভয়। বিভিন্ন রকম সাপ আমাদের চোখে পড়ে। তার মধ্যে এমনও কিছু সাপ আছে যেগুলোর দৈর্ঘ্য, রঙ ও বিষের কারণে অন্যতম। পৃথিবীতে বছরে প্রায় এক লাখ মানুষ সাপের দংশনে মারা যায়। প্রায় ৬০০ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে বিশ্বে। আজ তেমনই কিছু বিষধর সাপের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।

১. স্থল তাইপেন (Inland Taipan): বিশ্বের বিষধর সাপ হিসেবে স্থল তাইপেন শীর্ষে রয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম : Oxyuranus microlepidotus. এ সাপটি দেখতে হালকা বাদামি রঙের। গোখরো সাপের চেয়েও এর বিষ ৫০ গুণ বেশি বিষাক্ত। এই সাপ অস্ট্রেলিয়ায় বেশি চোখে পড়ে। হিংস্র সাপটি এক ছোবলে প্রায় ১১০ মিলিগ্রাম বিষ নির্গত করতে পারে। এই সাপের কামড়ে একটি মানুষের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে ৪০-৪৫ মিনিটই যথেষ্ট।

২. টাইগার সাপ (Tiger Snake) : টাইগার সাপ লম্বায় ৭ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এটি বিষধর সাপের মধ্যে অন্যতম স্থান দখল করে আছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম : Notechis scutatus। নদী, সমুদ্র, বিশেষ করে উপকূলীয় স্থান এরা পছন্দ করে। এর গায়ের রঙ হালকা কালচে বাদামি ও ডোরাকাটা। এর বিষ রক্ত ও মস্তিষ্ক অকার্য করে দেয়ার মতা রাখে।

৩. ডেথ অ্যাডার (Death Adder) : আপনি যদি বনজঙ্গলে শিকার করতে পছন্দ করেন, তাহলে ডেথ অ্যাডার সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা থাকতে হবে। কেননা, সাপটি গাছের আড়ালে শিকারের আশায় লুকিয়ে থাকে। হুট করে আপনি যদি ওর সামনে পড়েন তাহলেই হয়েছে। মুহূর্তেই আপনার ওপর আক্রমণ করে বসবে। সাপটি দেখতে যতটা শান্ত, মূলত এটি ততটা শান্ত নয়। এর গায়ের রঙ লাল ও হুলুদ মিশ্রিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম : Acanthophis antarcticus.

৪. ডেজার্ট হর্ন: ভাইপার ডেজার্ট হর্ন ভাইপার মূলত ছদ্মবেশী সাপের মধ্যে অন্যতম। এ সাপের দুই চোখের ওপর দুটো ছোট ছোট শিং থাকে। এরা কোনাকুনিভাবে লাফিয়ে উঠে কামড়ে ধরতে পারে। শিকার করার জন্য এরা ছদ্মবেশ ধরে। কিন্তু তার মধ্যে যদি কোনো মানুষ সামনে পড়ে যায়, তাহলে ভয় না পেয়ে উল্টো আক্রমণ করে বসে। মধ্যপাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় এই সাপ বেশি চোখে পড়ে।

৫. ইস্টার্ন ব্রাউন স্নেক : অত্যন্ত বিষধর এই সাপ বাড়ির আনাচে-কানাচে বা মাঠঘাটে থাকে। ইঁদুরের লোভে প্রায়ই এরা বের হয় এবং শিকার করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। এদের কামড় অত্যন্ত ভয়াবহ।

৬. চাপুল আইল্যান্ডের কালো টাইগার সাপ (Chappell Island Black tiger snake): -এর নাম কালো টাইগার হলেও মূলত এর রঙটিই শুধু কালো। এর শরীরে বাঘের মতো কোনো ডোরাকাটা দাগ নেই। বিষধর এ সাপের বৈজ্ঞানিক নাম : Notechis serventyi. সাপটি খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে এবং উপকূলীয় স্থানে বেশি বসবাস করে। এরা লম্বায় ছয় ফুটের মতো হয়।

৭. গোয়ার্ডার (Gwardar): দুর্ধর্ষ ও আক্রমণাত্মক সাপ হলো গোয়ার্ডার। এর গায়ের রঙ বাদামি বর্ণের। এর বসবাস অস্ট্রেলিয়ায়। বিষধর সাপের মধ্যে গোয়ার্ডার অন্যতম। একটি গোয়ার্ডার এক ছোবলে প্রায় ৩ মিলিগ্রাম বিষ ছাড়তে পারে, যা রক্ত ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়ার মতা রাখে। বৈজ্ঞানিক নাম : Pseudonaja nuchalis।

৮. জংলি গোখরা (Forest Cobra): গোখরা সাপ বনজঙ্গলে থাকতে পছন্দ করে। এরা লম্বায় অনেক বড় হয় এবং বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। এরা সহজেই এক গাছ থেকে অন্য গাছে চলাফেরা করতে পারে। এদের ফণা সব সাপের চেয়ে বড়। এরা খুব বড় শিকার করতে পারে। গোখরা সাপ একবার কামড়ে ধরলে সহজে ছাড়ে না। এটি তেমন দ্রুতগামী সাপ নয়। বনজঙ্গলেই এদের বেশি চলাফেরা। তবে ভালো খবর হলো, গোখরা সাপের বিষ স্নায়ুরোগ আলঝেইমার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারত এবং বিশ্বের অনেক দেশে গোখরা সাপ চোখে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *