মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তার মামলা ২২ দিনেও নেয়নি পুলিশ। এ কারণে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নারায়ণগঞ্জের নাগরিক ও সুশীল সমাজের নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ প্রভাবশালী একটি পক্ষকে খুশি করতেই মামলা নিচ্ছে না, আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না।
প্রশাসনের তদন্ত
গত ১৬ জানুয়ারির হামলার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনেরও একটি কমিটি হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার তিন সদস্যের এই কমিটির প্রধান। অপর দুই সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান ও র্যাব-১১-এর সহকারী পরিচালক (এএসপি) বাবুল আখতার। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার কথা। কমিটি আবেদন করে দুই দফায় নয় কার্যদিবস সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের সাক্ষ্য নেয়নি এই তদন্ত কমিটি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ওই দিনের ঘটনায় ভুক্তভোগী, হকার, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিকসহ ২০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। আমরা এই সপ্তাহের শেষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।’
মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের সাক্ষ্য নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি যখন কাজ শুরু করে, তখন মেয়র আইভী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া হয়নি। প্রয়োজন হলে সাংসদ শামীম ওসমানের বক্তব্য নেওয়া হবে।
আইভীর মামলা নেয়নি পুলিশ
মেয়র আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় গত ২৩ জানুয়ারি এজাহার দাখিল করেন। এতে সাংসদ শামীম ওসমানের ক্যাডার অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম, শাহ্ নিজামসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু এটিকে মামলা হিসেবে না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে পুলিশ। দীর্ঘ ১৮ দিনেও তা মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেনি পুলিশ।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ আবদুস সাত্তার বলেন, ‘মামলা না নেওয়ার বিষয়ে আমি বারবার থানায় যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ কোনো সদুত্তর দেয়নি।’
ওই ঘটনার ৯ দিন পর ২৪ জানুয়ারি পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করে।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি অস্ত্রধারী নিয়াজুল বাদী হয়ে তাঁর ছোট ভাই রিপনের মাধ্যমে অস্ত্র ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মেয়র আইভীর ভাই, সমর্থকসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
অস্ত্রধারী নিয়াজুলসহ অন্যরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ও সুশীল সমাজের নেতারা।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, ‘আমরা বরাবর বলে আসছি, স্থানীয় প্রশাসন একটি বিশেষ পরিবারের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের স্বার্থ বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে। এটি তারই প্রমাণ। প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা করার পরও মামলা গ্রহণ না করা এবং অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার না করা, এটি কোনোভাবেই আইনের শাসনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম বলেন, মেয়র আইভীর ওপর যখন হামলা হয়, তখন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। মামলা না নেওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠল। প্রভাবশালী কাউকে খুশি করতেই পুলিশ মামলা নেয়নি।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ না পাওয়ার কারণে তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে না। শামীম ওসমানের সময়ই নিয়াজুলের উত্থান। আইভী শুধু মেয়র নন, উপমন্ত্রী পদমর্যাদাধারী। যতক্ষণ পর্যন্ত মেয়রের ওপর হামলার বিচার না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, মেয়র আইভী ও নিয়াজুলের অভিযোগ জিডি হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। পুলিশের মামলায় অভিযোগ দুটি সম্পৃক্ত করে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। তদন্তকাজ চলছে। নিয়াজুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি নগরীর চাষাঢ়ায় ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও তার সমর্থকদের ওপর হকার ও সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থকদের সশস্ত্র হামলায় মেয়র আইভী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। এ সময় সাংসদ শামীম ওসমানের ক্যাডার অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম ও শাহ্ নিজামকে পিস্তল হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।