সাংবাদিক দম্পতি হত্যার ৬ বছর আজ , বিচারের খবর নেই

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

16e5928ee153a5817f3b7ee7e9ffb10a-

 ঢাকা: আত্মীয়স্বজন, পরিচিত মহল কিংবা চায়ের দোকানে দু-চারটি কথা বলার পরই সংবাদকর্মী হিসেবে প্রায়ই শুনতে হয় প্রশ্নটা। ‘আচ্ছা, আপনাদের সাগর-রুনি মার্ডারের কী হলো?’ কেউ কেউ ভাবেন, সংবাদকর্মীরা অনেক জানেন কিন্তু লেখেন না। তাই প্রশ্ন আসে, ‘আপনারা তো সব জানেন, কেন মারল তাঁদের?’ কেউ ভাবেন, সরকার ইচ্ছে করেই কিছু করছে না, ওই হত্যার সঙ্গে হয়তো নিগূঢ় কোনো রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র আছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁদের দেহ দুটি একাধিক ছুরিকাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছিল।

ওই হত্যার পর থেকে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নানা মুখরোচক মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাড়া ফেলেছিল। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ, কিংবা তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ আছে বলে তৎকালীন পুলিশপ্রধানের মন্তব্য এখন হাস্যরসে পরিণত হয়েছে। সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির, কিংবা মেহেরুন রুনির ভাই (মামলার বাদী) নওশের রোমান যেমন প্রতীক্ষায় আছেন খুনি কে তা জানার, সারা দেশের মানুষেরও অপার আগ্রহ মামলাটি নিয়ে। মা-বাবার রক্তাক্ত স্মৃতি নিয়ে বড় হচ্ছে তাঁদের একমাত্র ছেলেটি।

কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার যাদের হাতে, সেই র‍্যাব নতুন করে কিছুই জানাতে পারছে না। তদন্তে নতুন কিছু নেই বলে গতকালও জানিয়েছেন র‍্যাবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ৫৩তম দিন ছিল। র‍্যাব সেদিনও প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় আদালত এই মাসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ দিয়েছেন।

তবে মামলার তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের সাত মাসের মাথায় এসে সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব আসামিদের অচিরেই শনাক্ত করার আভাস দিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্তও আশার কথা শুনিয়েছেন র‍্যাবের কর্মকর্তারা। কিন্তু এখন পুরোটাকেই অপচয় বলা যায়।

সেই সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হয়ে সাগর-রুনি হত্যা মামলায় নিযুক্ত হয়েছিলেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের ওপর তখন সাংঘাতিক প্রত্যাশার চাপ তৈরি করা হয়েছিল। সবাই মনে মনে ভেবে বসে আছে, এই হত্যার পেছনে রাঘববোয়ালরা রয়েছেন। তাঁদের দু-একজনকে না ধরলে সাংবাদিক সমাজও মানবে না। তখন সন্দেহভাজন একজন পেশাদার চোরকেও ধরা হয়েছিল। কিন্তু তার কাছ থেকে চুরি হওয়া জিনিসপত্র পাওয়া যায়নি। স্বর্ণালংকার গলিয়ে ফেলা হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ডিবির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তখন আদালতে গিয়ে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে মামলা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার কথা জানান। ঢাকা মহানগর পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি এখন র‍্যাবের গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে, না পারছে গিলতে না পারছে ফেলতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *