সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ মামলার অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান আজ বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, মায়ের সহায়তায় ৬ মইনুল হোসেন রোডের ঠিকানা ব্যবহার করে অস্তিত্ববিহীন ট্রাস্ট গঠন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করে ওই ট্রাস্টের নামে সোনালী ব্যাংকের গুলশান নিউনর্থ সার্কেল শাখায় এসটিডি হিসাব খুলে জমা রাখেন। দীর্ঘদিনে কিছু জমি কেনা ছাড়া ট্রাস্টের নামে কোনো স্থাপনা করেননি। ডিড অব ট্রাস্টের শর্ত ভঙ্গ করে এতিম ও দুস্থদের জন্য কোনো টাকা তিনি ব্যয় করেননি। অথচ ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০০৬ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত অসৎ উদ্দেশ্যে ৫টি চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা ট্রাস্টের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হককে দেন। যার মধ্যে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার অপরাধ।
আজ এ মামলায় দেওয়া রায়ে তারেক রহমানসহ ছয় আসামির প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করেছিলেন এ মামলার বিচারিক আদালত। তবে ওই অপরাধে তারেক রহমানের যুক্ত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি বলে মনে করেছিলেন আদালত। সেই বিচার পর্যালোচনা করে প্রায় আড়াই বছর পর হাইকোর্ট বলেন, ‘তারেক রহমান সচেতনভাবে এই আর্থিক অপরাধের অংশ ছিলেন। তাই তিনি কোনো ধরনের ছাড় পেতে পারেন না।’
মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানকে সাত বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাঁকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে দেখা যায়, তারেক রহমান এমন একটি রাজনৈতিক শ্রেণির সদস্য, যাঁদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দিকনির্দেশনা দেওয়া, অথচ তিনি সচেতনভাবে একটি আর্থিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তিনি তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে পরামর্শ মাশুলের নামে নোংরা অর্থ অর্জন করেছেন। আর এতে তাঁর সহযোগী ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। এ ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবপুষ্ট দুর্নীতি দেশের সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি।’
রায়ে হাইকোর্ট আরও বলেন, যেহেতু তারেক রহমান এখন পলাতক, তাই তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার বা আত্মসমর্পণ করার পর দণ্ড কার্যকর হবে। এ জন্য তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারির জন্য বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ঘুষের টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার: ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক ও মামুনকে আসামি করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলাটি করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশন্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ওই টাকা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের ব্যাংক হিসাবে পাচার করা হয়। ওই টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে খরচ করেন তারেক রহমান।
২০১১ সালের ৬ জুলাই এই মামলার বিচার শুরু হয়। রায় হয় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর। রায়ে তারেক রহমানকে খালাস এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
পরে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট দুদকের আপিল গ্রহণ করে তারেককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। লন্ডনপ্রবাসী তারেক না ফেরায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে সমন জারি করে তাঁর লন্ডনের ঠিকানায় পাঠান। কিন্তু তাতেও তারেক রহমান সাড়া দেননি। পরে তাঁকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত। এরপর দুদকের করা আপিলের সঙ্গে কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপিল একই সঙ্গে শুনানি শুরু হয়। গত ৪ মে হাইকোর্টে দুটি আপিলের একসঙ্গে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ১৬ জুন।