মালদ্বীপের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের পক্ষে এ জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন আইনমন্ত্রী আজিমা শাকুর। পরে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মালদ্বীপের সরকার দেশের সব নাগরিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চয়তা দিচ্ছে, দেশের সব নাগরিক এবং এখানে বসবাসরত ও ভ্রমণরত সব বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’
প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম মুয়াজ আলিও জরুরি অবস্থা জারির খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ২৫৩ অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে সোমবার থেকে আগামী ১৫ দিনের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট। আর সংবিধানের ২৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা জারির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংকট সমাধানের উপায় প্রস্তাব করে তা পার্লামেন্টে উপস্থাপন করতে হবে।
বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) সাংসদ এভা আবদুল্লাহ বলেন, ‘জরুরি অবস্থা জারি করা মরিয়া চেষ্টা। এতে বোঝা যায়, তিনি (প্রেসিডেন্ট) জনগণ, পার্লামেন্ট, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও আদালতের আস্থা -সবকিছু হারিয়েছেন। তাঁর এখনই পদত্যাগ করা উচিত।’
গত সপ্তাহে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সন্ত্রাসবাদে জড়িত অভিযোগে কারাবন্দী বিরোধীদলীয় নয়জন নেতাকে মুক্তির আদেশ দেন। এঁদের মধ্যে বিদেশে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদও রয়েছেন। এ ছাড়া বহিষ্কার করা ইয়ামিনের দলের ১২ জন আইনপ্রণেতাকে স্বপদে ফিরিয়ে আনার আদেশও দেন আদালত। এই ১২ জন আইনপ্রণেতার ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ ফিরিয়ে নেওয়া হলে ৮৫ সদস্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে সরকারি দল। কিন্তু ইয়ামিনের সরকার আদালতের এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করলে শুরু হয় রাজনৈতিক সংকট।
আদালত প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে একটি রুলও জারি করেন। প্রেসিডেন্টের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে সমালোচনা করা হয় ওই রুলে। এর আগে আইনমন্ত্রী শাকুর বলেছিলেন, রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির যে আদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছেন, তা সরকার পালন করবে—এমনটা তিনি বিশ্বাস করেন না। আদালতের আদেশ পালন না করায় অ্যাটর্নি জেনারেল ও প্রধান কৌঁসুলিকে অপসারণের জন্য রোববার পার্লামেন্টে একটি পিটিশন দেন বিরোধী দলের নেতারা। এরপরই পার্লামেন্ট সিলগালা করে এর চারপাশে সতর্ক অবস্থান নেয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। আদালতের আদেশ কার্যকর না করতে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি আহ্বানও জানান প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারক আবদুল্লাহ সাঈদসহ অন্য বিচারকদের বরখাস্ত করার উপায় খুঁজছেন।
তবে মালদ্বীপের সর্বোচ্চ আদালত দেশের বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতি অবসানে রোববার প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাহায্য চেয়েছেন। একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে মালদ্বীপের পার্লামেন্টের মহাসচিব ও উপমহাসচিব পদত্যাগ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, মালদ্বীপের বিচার বিভাগীয় প্রশাসনের প্রধান হাসান সাঈদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ভারত বলেছে, মালদ্বীপের চলমান পরিস্থিতি ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ’ করা হচ্ছে।
মালদ্বীপে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিরোধীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।