৮ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে এক দিকে দেশজুড়ে আতঙ্ক; অপর দিকে রয়েছে উত্তেজনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকালও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। বিএনপি বলেছে, তাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক অভিযান চালাচ্ছেন পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। রাস্তা-ঘাটে বাড়ানো হয়েছে তল্লাশি অভিযান। আজকালের মধ্যে সিনিয়র অনেক নেতা গ্রেফতার হচ্ছেন বলে আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সহদফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি। এ ছাড়া রাজধানীতে আরো অন্তত ২০ জন গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন মফস্বলে। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার সিলেট গমন উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের আশপাশ শহর ও গ্রামাঞ্চলে রোববার রাত থেকে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়। বিএনপির অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন।
গত ৩০ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালত থেকে ফেরার পথে হাইকোর্টের সামনে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশ ভ্যান থেকে তিন বিএনপি কর্মীকে মুক্ত করে নেয় দলীয় নেতাকর্মীরা। ওই দিন থেকেই শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। এই অভিযান আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য। দেশের কোথাও যাতে কোনোরূপ আন্দোলন দানা বাঁধতে না পারে সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর সেই টার্গেট সামনে রেখেই চালানো হচ্ছে গ্রেফতার অভিযান। শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়; ২০ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলের নেতাকর্মীরাও গ্রেফতার হচ্ছেন।
গ্রেফতার অভিযান শুরুতে ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় এলোপাতাড়ি গ্রেফতার শুরু হয়েছে। বর্তমানে যা গণগ্রেফতারে রূপ নিয়েছে। গত ৬ দিনে প্রায় ৮ শ’ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন।
ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ সারির অনেক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, নাজিম উদ্দিন আলম, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালসহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন ও আনিসুর রহমান খোকনসহ অনেকেই ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। আরো অনেককে গ্রেফতারের জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চলছে বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকেও আটক করেছিল পুলিশ। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজকালের মধ্যে সিনিয়র আরো অনেক নেতা গ্রেফতার হচ্ছেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে যারা সক্রিয় তাদেরকে টার্গেট করে গ্রেফতার অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।
একের পর এক নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটে এক দিকে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে; অপর দিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় কী হয় তা নিয়ে চলছে উত্তেজনা। একটি সূত্র বলেছে, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ইতোমধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে করণীয় নিয়ে একাধিক মিটিং হয়েছে।