মাগুরা : ফুল ভালোবাসার প্রতীক। সৃষ্টির শুরু থেকেই ফুলের প্রতি রয়েছে মানুষের গভীর আকর্ষণ। প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে, মান-অভিমানের সময়ে প্রিয়জনের ঠোঁটে হাসির রেখা ফোটাতে ফুলই শ্রেয়। ফুলের যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তেমনি রয়েছে স্বর্গীয় সুখানুভূতিও।
আর এই ফুল চাষ করে দিন পাল্টে গেছে মোবাশ্বের আলী উজ্জলের। ফুলের প্রতি অদম্য ভালবাসা থেকে এর বাণিজ্যিক চাষে নিজেকে সফল চাষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মাগুরার এই যুবক। তার হাত ধরেই মাগুরায় এই প্রথম বারের মতো শুরু হয়েছে ফুলের বাণিজ্যিক আবাদ। সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের উজ্জলকে এখন এলাকার মানুষ ফুল উজ্জল হিসেবে এক নামে চেনেন।
উজ্জল জানিয়েছেন-ফুলের প্রতি তার ছেলেবেলা থেকেই তার অদম্য ভালবাসা রয়েছে। যা থেকেই তিনি এই ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। প্রথমে ২০১১ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ফুল চাষের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে গত মৌসুমে তিনি ৫০ শতক জমিতে প্রথম গাঁদা ফুলের চাষ করেন। যা থেকে খরচ বাদে প্রথম বছরেই ভালো লাভ হয়। যে কারণে ফুল চাষের প্রতি তার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। এ বছর তিনি নতুন করে আরো ৬০ শতক জমিতে এ চাষ সম্প্রসারণ করেছেন।
উজ্জলের ফুলখেতে গিয়ে দেখা যায়, গোটা মাঠজুড়ে গাঢ় ও সাধারণ হলুদ জাতের গাঁদা ফুলের সমারোহ। সেখানে কাজ করছেন বেশ কিছু অভিজ্ঞ বাগান শ্রমিক। মোবাশ্বেরের চাষ দেখে এলাকার অনেকেই এখন এই চাষের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
উজ্জল জানান, ইতিমধ্যে তিনি ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি কমপক্ষে দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। আগামী বছরে এই চাষ আরো সম্প্রসারণ করবেন বলে উজ্জল জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় বাজার না থাকায় ও ফুল পরিবহনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে।
তিনি জানান, মাগুরাসহ এ অঞ্চলের ফুলের বড় বাজার ‘ঢাকা’। ঢাকায় ফুলের চালান পাঠালে অনেক সময় দৌলৎদিয়া ফেরি ঘাটে যানজটের কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়।
এ দিকে মোবাশ্বেরের ফুল চাষের পেছনে প্রধান পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন মাগুরা পৌর এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, এ অঞ্চলের ফুলের বাণিজ্যিক চাষ নেই। সে কারণেই কৃষকদের উদ্যোগী করে তোলা হচ্ছে। মোবাশ্বেরের মাধ্যমে কার্যত এটির গোড়া পত্তন হয়েছে। যা ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারিত হবে। তবে সে জন্যে স্থানীয় বাজার তৈরি ও ফুলের পরিবহন ব্যবস্থা সহজ করা জরুরি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কুমার চক্রবর্তী জানান, উজ্জলসহ নতুন করে যারা ফুল চাষে আগ্রহী হবে তাদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সমস্ত রকমের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে। গাদা ফুলের পাশাপাশি অন্যান্য জাতের ফুলের বীজ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে ফুল চাষিদের দ্বিতীয় শস্যবহুমুখী করণ প্রকল্পের আওতায় সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে।