সাইবার অপরাধ দমনে নতুন আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ আর তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাসহ পাঁচটি ধারা বাতিল করা হয়েছে৷ তবে ডিজিটাল আইনও এবার সমালোচনার মুখে৷ এই আইন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আরো সংকুচিত করবে৷
নতুন আইনের ১ থেকে ১৬ ধারায় ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেন্সিক ল্যাব, এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে৷
ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে সেই ব্যক্তি ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷
২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাতকরে, তাহলে তার ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা হবে৷
২৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ মানহানিকর কোনো তথ্য দিলে সেই ব্যক্তির তিন বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে৷
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাই ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা হিসেবে ফিরে এলো কিনা – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, এ আইনে কোথাও কোনো ধারায় সাংবাদিকদের ‘টার্গেট’ করা হয়নি৷”
বেআইনিভাবে কারুর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে তাকে সাত বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে৷ এছাড়া বেআইনিভাবে অন্য সাইটে প্রবেশ করার পর যদি কেউ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে৷
কেউ যদি বেআইনিভাবে কারও ডিভাইসে প্রবেশ করেন, তাহলে এক বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে৷ কেউ যদি কারও ডিভাইসে প্রবেশে সহায়তা করেন, তাহলে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয় দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করেন, তাহলে তিনি ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷
২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়ভীতি দেখান, তাহলে তাকে তিন বছরের জেল ও তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে
৩০ ধারায় বলা হয়েছে, না জানিয়ে কেউ যদি কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে ব্যাংক-বীমায় ই-ট্রানজেকশন করেন, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া যাবে৷
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে তাকে সাত বছরের জেল ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হতে পারে৷
এই আইনের ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার সব অপরাধ জামিন অযোগ্য৷ তবে ২০, ২৫, ২৯ এবং ৪৮ ধারার সব অপরাধ জামিনযোগ্য৷
ডিজিটাল আইনের খসড়া তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যা প্রস্তাব করেছি, তা রাখা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে নতুন ডিজিটাল আইনে বিতর্কিত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নতুন আইনের ১৮ এবং ১৯ ধারায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ৩২ ধরায় যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্র এবং স্বাধীনতা আরো সংকুচিত হবে৷”
৫৭ ধারার মামলাগুলো চলবে
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ পাঁচটি ধারা বাতিল হলেও এ ধারায় যে মামলাগুলো চলমান, সেগুলো চলবে৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হবে৷ তবে যেহেতু ধারাটি থাকবে না বিচারকের রায়ই এখানে চূড়ান্ত৷”
সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সারাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে ৭৪০টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলা করা হয় ৫৭ ধারায়৷
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম