সব সরকারি চাকরিজীবীর জন্য ভর্তুকি সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে যাচ্ছে সরকার। সরকারি চাকরির বয়স পাঁচ বছর হলেই এই গৃহঋণ পাওয়া যাবে। ঋণের সুদের অর্ধেকটা সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। বাকি অর্ধেক সুদ সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীকে বহন করতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থমন্ত্রীর আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে বলে জানা গেছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণ দেবে ব্যাংকসহ রাষ্ট্রীয় পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চারটি হচ্ছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। অন্যটি হচ্ছে সরকারি গৃহঋণদানকারী সংস্থা বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণের খুঁটিনাটি বিষয় পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য গতকালই গঠন করা হয়েছে একটি কারিগরি কমিটি। ৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে। এতে সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন বিএইচবিএফসির একজন কর্মকর্তা। সদস্য হিসেবে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ছাড়াও সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংকের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। গতকাল অর্থসচিবের সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রণালয়ে এ সম্পর্কিত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী গতকাল এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের হাউজ লোন দেয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর সাথে কথা বলেছি। ব্যাংকগুলো তো আর সস্তায় ঋণ দিতে পারবে না। তাই ব্যাংক রেট আর মার্কেট রেটের গ্যাপটা পূরণ করার চিন্তাভাবনা সরকার করছে। আমরা চাই চাকরিতে থাকা অবস্থায় একজন সরকারি চাকরিজীবী ঋণ নিয়ে যেন একটি বাড়ি তৈরি করতে পারেন। তিনি শহরে বা গ্রামে যেকোনো জায়গায় এই ঋণের অর্থ দিয়ে বাড়ি করতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থসচিব বলেন, চলতি অর্থবছর থেকে হয়তো সম্ভব হবে না, তবে আগামী অর্থবছর থেকে যাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায় সেদিকে নজর রেখে কাজ চলছে। বিএইচবিএফসির পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি ব্যাংকগুলোকে গৃহনির্মাণ ঋণের সাথে সম্পৃক্ত করা হবে। এ ঋণের সুদের হার বাজারে প্রচলিত সুদের হার অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। তবে বাজার সুদের অর্ধেকটা সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গৃহনির্মাণ ঋণের সীমা যুগোপযোগী করতে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন ওই বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ আর এম নজমুস ছাকিব। কমিটি এক বছরের বেশি সময় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে। এরপর গত ১২ ডিসেম্বর অর্থসচিবের কাছে সুপারিশ পেশ করা হয়। গতকালের বৈঠকে কমিটির সেই সুপারিশ পর্যালোচনা করে কমিটির প্রতিবেদনটি আরো সহজ করার পক্ষে মত দেয়া হয়। বলা হয়, সব সরকারি চাকরিজীবী যাতে স্বল্প সুদে গৃহঋণ পান তা নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে অর্থ বিভাগ থেকে সুপারিশকৃত গৃহনির্মাণ ঋণের সিলিং বা সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল সর্Ÿনি¤œ ২০ লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা। এই ঋণের সুদের হার প্রস্তাব করা হয় সাড়ে ৮ শতাংশ। এই সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ দেবে ঋণগ্রহিতা সরকারি চাকরিজীবী এবং বাকি সাড়ে ৩ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার। সুদে ভর্তুকি দেয়ার জন্য বছরে সরকারের ব্যয় ধরা হয় ৭০০ কোটি টাকা থেকে ৯৮০ কোটি টাকা। প্রস্তাবে সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেড ও বেতনের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলা হয়।
বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের ঋণের সিলিং রয়েছে সর্বোচ্চ এক লাখ ২০ হাজার টাকা।