গ্রাম ডেস্ক
ঢাকা: ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর গণধর্ষণের অভিযোগের জেরে গ্রামে বসল সালিশি সভা। সালিশিতে বিষয়টি মিটিয়ে না নিলে বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে, দাবি করেছে নির্যাতিতার পরিবার। সালিশি সভার জন্য মদের দামও মেটাতে হয়েছে মেয়েটির বাবাকে। পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগের পর এখন গ্রামে ফিরলেও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ওই পরিবার। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
পত্রিকাটি বলেছে, ঘটনাস্থল আবারও বীরভূমের এক আদিবাসী গ্রাম। মহম্মদবাজারের এক গ্রামের এই ঘটনায় মাস ছয়েক আগের লাভপুর-কাণ্ডের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। এ বার অভিযোগের তির অবশ্য তিন আদিবাসী স্কুলছাত্রের দিকে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, নির্যাতিতা মেয়েটি গ্রামেরই একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ঘটনার দিন বিকেলে সে বাড়ির বাইরে খেলতে গিয়েছিল। অভিযোগ, তাকে একা পেয়ে গ্রামেরই তিনটি ছেলে (যারা একই স্কুলে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পড়ে) তার মুখে গামছা চেপে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে।
মেয়েটি এ দিন বলে, “বাড়িতে কাউকে কিছু জানালে ওরা আমাকে খুন করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। ভয়ে প্রথমে কাউকে ঘটনার কথা বলতে পারিনি। পরে মাকে সব জানাই।” পরের দিনই মেয়েটির বাবা গ্রামের মাঝি-হাড়ামের (মোড়ল) কাছে ওই তিন ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। শনিবার দুপুরে মাঝি-হাড়ামের বাড়ির উঠোনে সালিশি বসে। সেখানে বিচার না পেয়ে মেয়েটির বাবা পরের দিনই পুলিশের দ্বারস্থ হন। এ দিন গ্রামের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, “সালিশি সভার মাথারা ধর্ষণের কথা মানতেই রাজি ছিল না। প্রকৃত বিচার পেতে পুলিশের কাছে আমার মেয়ে অভিযোগ জানিয়েছে।” তাঁর দাবি, আদিবাসী সমাজের নিয়ম অনুযায়ী ওই সালিশি সভার জন্য তাঁকে তিন হাড়ি মদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি মাঝি-হাড়ামকে মদের দাম বাবদ ১০০ টাকা মিটিয়েওছেন।
রবিবার দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ হয়। রাতেই পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। লাভপুর-কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে তৎপর হতে দেখা গিয়েছে জেলার বর্তমান পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াকেও। ঘটনার কথা জানতে পেরেই তিনি রবিবার সোজা মহম্মদবাজার থানায় চলে যান। সেখানেই তিনি মেয়েটি ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। অভিযোগ পেয়েই মহম্মদবাজার থানার ওসি চয়ন ঘোষও গ্রামে পুলিশ বাহিনী নিয়ে তদন্তে যান।
পরে এসপি বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিনই সিউড়ি সদর হাসপাতালে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে।” ভারপ্রাপ্ত হাসপাতাল সুপার সুশান্ত মাঁকড় জানিয়েছেন, পরীক্ষার রিপোর্ট শীঘ্রই পুলিশকে পাঠানো হবে। মেয়েটির অবস্থা স্থিতিশীল। তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারটি গ্রামে ফিরেছে, তাদের পুলিশি নিরাপত্তাও দেওয়া হয়েছে, জানান পুলিশ সুপার।
গ্রামের মাঝি-হাড়াম গঙ্গু মুর্মুও ধর্ষণের ঘটনার বিচারের জন্য সালিশি সভার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি রবিবার ফোনে বলেন, “মেয়েটির বাবার অভিযোগ পেয়ে আমাদের সমাজের নিয়ম মেনে সালিশি ডেকেছিলাম।” তাঁর দাবি, অভিযুক্ত কিশোররা জানায়, মেয়েটির সঙ্গে তারা খেলাধুলা করছিল। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। গঙ্গু মুর্মু বলেন, “উভয় পক্ষের কথা শুনে আমরা মেয়েটির বাবাকে জানিয়ে দিই, এ ভাবে প্রথমেই ধর্ষণের অভিযোগ মানা যাবে না।” এর পরেই মেয়েটির বাবা পুলিশে অভিযোগ জানানোর কথা বলে সভার মাঝপথেই বেরিয়ে যান। বিচার অমীমাংসিত থাকায় ওই ঘটনায় কাউকে জরিমানা বা কোনও নিদান দেওয়া হয়নি বলেই গঙ্গুর দাবি।
বিকেলে গ্রামে ঢুকে দেখা গেল পরিস্থিতি থমথমে। ঘটনা সম্পর্কে গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই মুখ খুলতে রাজি নন। তাঁদেরই মধ্যে একজন শুধু বলেন, “এ দিন দুপুর পর্যন্ত অভিযুক্তেরা এবং গ্রামের মাঝি-হাড়াম গ্রামেই ছিল। থানায় অভিযোগ হচ্ছে খবর পেয়েই সবাই পালিয়েছে।” গঙ্গু মুর্মু অবশ্য দাবি করেন, তিনি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে আছেন। নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকির অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, মদের জন্য আদায় করা টাকা তিনি ওই পরিবারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।