বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার পর থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। মামলার রায়ে সরকারের হস্তক্ষেপ থাকতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে উদ্বেগে রয়েছে বিএনপি। একই সাথে দলটি অন্যায় কিছু হলে রাজপথে প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। অপর দিকে সরকার এ রায় ঘিরে যেকোনো সহিংস পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমনের কথা ঘোষণা করেছে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়। এক-এগারো সরকারের সময়ে দায়ের করা এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
জানা গেছে, মঙ্গলবার এ রায়ের বিষয়টি বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয় দলই গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজপথে নামার। অন্য দিকে বিএনপিকে আরো কোণঠাসা করার পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীনরা।
মামলার রায় নিয়ে গতকাল শনিবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আজ রোববার ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করে মামলা সম্পর্কিত বিষয়ে জোটগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইতোমধ্যে রায়ে নেতিবাচক কিছু হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। জানা গেছে, মামলার রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বেগম খালেদা জিয়া। মানসিকভাবে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্র মতে, রায়ের দিনক্ষণ নির্ধারণের পর ঢাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। অঙ্গসংগঠনের নেতারাও পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সারা দেশে শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে রায় না দেখে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। এ ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষ যাতে ফায়দা নিতে না পারে সে ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে দলটির হাইকমান্ড। রায় নিয়ে আইনি লড়াইয়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র আইনজীবীরা প্রাথমিক কাজ শেষ করেছেন।
রায় নিয়ে বিএনপির ভাবনার বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে যেতে না দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। আর এটি করা হলে নির্বাচনের জন্য বিএনপি তৈরি হচ্ছিল, তা বাধাগ্রস্ত হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রায় হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। বিএনপি ওই রায় নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি দিক বা না দিক, কিছু যে ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা দেয়া যায় না।
অন্য দিকে রায় নিয়ে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সরকারি সূত্রগুলো জানায়, খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘিরে বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তাই পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলে রাখবে। ইতোমধ্যে সারা দেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে এ কর্মসূচি আরো জোরদার করা হবে।
রায় নিয়ে দুই দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে নতুন করে সঙ্ঘাতের আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষক মহল।