কাউকে না বলেই উধাও হয় জঙ্গি রবিন : লাশ গ্রহণে পরিবারের অনীহা

Slider সারাদেশ

nikhojরাজধানী ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ার ‘রুবি ভিলা’ ভবনের ৫ম তলার জঙ্গি আস্তানায় নিহত জঙ্গি রবিন (১৪) কাউকে কিছু না বলেই বাড়ী থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। রবিনের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা  রবিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে গিয়ে রবিনের লাশ শনাক্ত করেন। তবে সে লাশ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছেন।  সোমবার বিকেলে শেরপুরে নকলা উপজেলার কুর্শাবাদাগৈড় এলাকার রবিনের বাড়ীতে গেলে এমন কথাই জানিয়েছেন তার মা ও বড় ভাই।

রবিনের মা মালেকা বেগম জানান, ভেবেছিলাম ছেলে হয়তো ইজতেমায় কিংবা আত্মীয় বাড়ী গিয়েছে, শীঘ্রই ফিরে আসবে। এমন আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু এখনতো সব শেষ হয়ে গেলো। তিনি বলেন, আমার কোলের বাচ্চা, মহব্বত আছে। কিন্তু লাশ দিয়া আমরা কী করমু। শিশু বাচ্চা, হেরাই যদি দাফন করে করুক।

নিহত রবিনের বড় ভাই গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি ও তার বোন জামাই মো. আলামীন ঢাকায় মর্গে গিয়ে রবিনের লাশ শনাক্ত করেছেন। রবিনের লাশ শেরপুর নিয়ে আসার বিষয়ে তিনি জানান, র‍্যাব থেকে বলা হয়েছে লাশ গ্রহণের বিষয়ে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা। তিনি বলেন, আমাদেরতো থাকনেরও জায়গা নাই। ভাড়া বাসায় থাহি। কোডায় লাশ মাডি দিমু। তাই আমরা রবিনের লাশ নিতে চাইনা। কিন্তু যারা রবিনেরে ‘জঙ্গি’ বানাইলো আমরা তাদের বিচার চাই। যাতে আর কারো এমন সর্বনাশ না ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রবিন ছিল সবার ছোট। সে স্থানীয় নকলা শাহরিয়া মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও ভাইয়ের সাথে ব্যবসায় জড়িত হওয়ার কারণে আর পড়ালেখা হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ফজর আলীর মৃত্যুর পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দিলে ২০১৩ সালে বড় ভাই গোলাম মোস্তফার সঙ্গে চালের ব্যবসায় যুক্ত হন রবিন।

গত ৭ জানুয়ারি দোকানের ক্যাশ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে উধাও হয় রবিন। তারপর থেকে আর কোন খোঁজ মিলছিলো না। গত ২০ জানুয়ারি দুপুরে নকলা থানায় একটি জিডিও করেন তার বড় ভাই গোলাম মোস্তফা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে র‍্যাবের বরাতে প্রকাশিত ছবি দেখে নিহত অজ্ঞাত দুই জঙ্গির একজনকে রবিন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে, এলাকায় অনুসন্ধানকালে সহজ সরল প্রকৃতির রবিন কি করে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ল এমন প্রশ্ন অনেকের। মোবাইল ফোনে ফেসবুকের মাধ্যমে রবিন জঙ্গি তৎপরতার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে বলে অনেকর ধারণা। তাছাড়া ধর্মীয় অনুরাগ এবং পারিবারিক অসচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা তাকে তাদের দলে ভেড়ানোর সুযোগ পায় বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ।

তবে একই অভিযানে নিহত আরেক জঙ্গি চট্টগ্রামের নাফিস প্রায় তিন মাস আগে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নকলায় রবিনদের বাড়ীতে অবস্থান করেছিলো বলে জানা গেছে। রবিনের মা এবং বড় ভাই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাফিসের মাধ্যমেই রবিন জঙ্গি তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি র‍্যাব তদন্ত করছে।

এ বিষয়ে শেরপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, মোবাইল ফোন, ফেসবুক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। আমি কার সাথে এড হচ্ছি, কোথায় লাইক, কমেন্ট করছি, আমাকে কোন দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে প্রয়োজনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *