শিক্ষামন্ত্রীর পিওসহ ‘নিখোঁজ’ ৩ জন গ্রেপ্তার

Slider বিচিত্র

image-122118

 

 

 

 

 

লেকহেড গ্রামার স্কুল পুনরায় চালুর জন্য ৬ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। গতরাত ৯টার দিকে এ গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দুজন হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন ও লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিন। ঘুষের ৬ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, বন্ধ হওয়া লেকহেড গ্রামার স্কুল খুলে দেওয়ার শর্তে ৬ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হয়। শিক্ষামন্ত্রীর পিও মো. মোতালেব হোসেন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. নাসিরউদ্দিনকে এ টাকা দেওয়া হয়। ডিবি সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রিসিভ ও ডেসপাস শাখার উচ্চমান সহকারী মো. নাসিরউদ্দিনকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে মোতালেব হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে লেকহেড গ্রামার স্কুলের মো. খালেদ হাসান মতিনকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে একদিনের ব্যবধানে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাকে। সর্বশেষ শনিবার বিকালে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেনকে জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার পর পরিবারের সদস্যরা ওই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে নিখোঁজ হন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন। তিনি বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব। ওই ঘটনায়ও একটি জিডি হয়।
কর্মকর্তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে গতকাল রবিবার একটি সভা করেন শিক্ষামন্ত্রীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, কেন ও কারা তাদের নিয়ে গেল, তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। বিষয়টি জানার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেন তিনি। এ বিষয়ে কেউ কোনো ক্লু পেয়ে থাকলে তা জানানোর অনুরোধ জানান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শনিবার বিকালে রাজধানীর বসিলা এলাকায় নির্মাণাধীন নিজস্ব বহুতল বাড়ির কাজের তদারক করছিলেন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন। ওই সময় কয়েক ব্যক্তি তাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এর  আগে নিখোঁজ হন নাসিরউদ্দিন। দুটি ঘটনায় উদ্ধার ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ওই চিঠির বরাত দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা আফরাজুর রহমান বলেন, শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হন মোতালেব। এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। তার বড় ভাই রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। হাজারীবাগ থানার ওসি মীর আলীমুজ্জামান বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে, এখনো তার সন্ধান পাইনি।
আফরাজুর রহমান জানান, মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে সচিবালয়ের দিকে আসছিলেন। তিনি এরপর থেকে নিখোঁজ। তার শাশুড়ি বনানী থানায় জিডি করেছেন।
নাসিরের ভায়রা নাইম আহমেদ জুলহাস বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বনানী আরএম নামে বনানীর একটি গ্রুপ অব কোম্পানিজে গিয়েছিলেন নাসির। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে তার স্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেন; কিন্তু দুপুর ২টার পর তার সঙ্গে থাকা দুটি মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এর পর থেকে খোঁজ মেলেনি। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার লেকসিটি কনকর্ড টাওয়ারে সপরিবারে থাকেন নাসিরউদ্দিন।
তার পরিবারিক সূত্র জানায়, এলাকায় একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। তবে একই মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তাকে তুলে নেওয়ায় ঘটনাতে পরিবারের কাছে সন্দেহ রয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই তার শ্বশুর আবদুল মান্নান থানায় জিডি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *