ভিন্ন তিনটি সাইজের গ্রানাইট পাথরের স্ল্যাব নিয়ে চট্টগ্রামের মাঠকর্মীদের বিরক্তির শেষ ছিল না। চন্দিকা হাতুরাসিংহের নির্দেশনায় প্র্যাকটিস উইকেটের ওপর স্ল্যাবগুলো বসাতে যে হতো তাঁদেরই! এর মধ্যে সবচেয়ে ভারী স্ল্যাবটি তুলে নিতেও লাগত ১২-১৩ জনের লোকবল।
জিম্বাবুয়ে সিরিজের সময় ওই স্ল্যাব বয়ে নেওয়ায় মাঠকর্মীদের আপত্তির কথাও শোনা গেছে কখনো কখনো। তবে জাতীয় দলের হেড কোচ চেয়ে সময়মতো উইকেটের ওপর স্ল্যাব পাননি-এমন খবর নেই। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রায়ই তিনি ব্যাটসম্যানদের গ্রানাইট পাথরের স্ল্যাবে ব্যাট করিয়ে গেছেন।
কারণ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ। সেখানে উইকেটে বল পড়ে খুব দ্রুতগতিতে ব্যাটসম্যানের দিকে ধেয়েই শুধু যাবে না, বাড়তি বাউন্সও হবে। সেটার প্রস্তুতি তো আর দেশের লো বাউন্সের উইকেটে হবে না। তাই বিকল্প হিসেবে হাতুরাসিংহের ধরিয়ে দেওয়া ফর্দ অনুযায়ী স্ল্যাব কিনে দিয়েছে বিসিবি। তাতে জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতির মধ্যেও কখনো কখনো ‘এক চিলতে’ অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ডের উইকেটেও ব্যাট করেছেন ব্যাটসম্যানরা।
অর্থাৎ ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে আরো আগে থেকেই। যদিও সিরিজ চলাকালে ক্রিকেটারদের কেউ কেউ বিশ্বকাপবিষয়ক আলোচনায় খুব একটা সাড়া দেননি। ‘বিশ্বকাপ আরো পরের ব্যাপার’-বলে বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন প্রসঙ্গটি। কিন্তু ক্রিকেটাররা নিজেরাও তো বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছিলেন। নইলে, ‘এখানকার লো বাউন্সের উইকেটে ভালো না করলে তো আর আমাকে বিশ্বকাপের জন্য বিবেচনা করা হবে না। তাই এখন গ্রানাইটের স্ল্যাবে ব্যাট করার দরকারটা কী’-এমন প্রশ্ন উঁকি দেবে কেন ব্যাটসম্যানদের মনে?
আজ থেকে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমে পড়বেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এখানেও ক্রিকেটারদের আরো ভালো করার তাগিদ বাড়িয়ে দিয়ে থাকবে বিশ্বকাপ। কারণ জিম্বাবুয়ে সিরিজে যাঁরা সুযোগ পাননি, তাঁদের নিজেদের প্রমাণের শেষ মঞ্চ আপাতত প্রিমিয়ার লিগই।
পুরো ডিসেম্বর মাসটা প্রিমিয়ার লিগ খেলার জন্যই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের। যদিও অন্য অনেকের মতো আজই মাঠে নেমে পড়ার সুযোগ নেই লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের তামিম ইকবালের। এমআরআইতে তাঁর বাঁ ঊরুর পেছনের দিকে ‘গ্রেড ওয়ান’ ইনজুরি ধরা পড়ায় আপাতত তাঁকে বিশ্রামে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ফিজিও। একই দলের হয়ে সাকিব আল হাসান আজ মাঠে নামলেও রূপগঞ্জের হয়ে তাঁকে খুব বেশি ম্যাচের জন্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসর বিগ ব্যাশে খেলতে চলে যাবেন এ তারকা অলরাউন্ডার। তিনিই একমাত্র ব্যতিক্রম। এ ছাড়া জাতীয় দলের আর সব ক্রিকেটারকে প্রিমিয়ার লিগ খেলেই বিশ্বকাপের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ প্রস্তুতি সেরে নিতে হবে।
এর আগে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যেই বিশ্বকাপের জন্য ৩০ জনের প্রাথমিক দল জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। আর ১৫ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণার শেষ সময় ৭ জানুয়ারি। হাতুরাসিংহের বিশ্বকাপ অনুশীলন শিবির শুরু করার কথা মূল দল ঘোষণার পরই। গতকাল রাতের ফ্লাইটে ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া কোচের সূচি অনুযায়ী মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সেই শিবিরটা শুরু হবে ১২ জানুয়ারি। ১২ দিনের প্রস্তুতি শেষে ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ব্রিসবেনের উদ্দেশে। নিজেদের খরচে সেখানে সপ্তাহ দুয়েকের অনুশীলনসূচি ঠিক হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই।
বিশ্বকাপের দল গড়ার কাজটা অবশ্য নির্বাচকদের জন্য কঠিন করে তুলেছেন ক্রিকেটাররাই। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সেটি বুঝতে পারছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানও, ‘নির্বাচকদের জন্য এখন দল নির্বাচন করাই কঠিন হবে। এখন জুবায়ের আছে, তাইজুল আছে, আরাফাত সানি আছে। কাকে রেখে কাকে বাদ দেবে!’ বিশ্বকাপের আগে প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ খুশি অন্য কারণে, ‘অনেক পারফরমার থাকার সুবিধা হলো ইনজুরি বা অন্য কোনো কারণে কাউকে বদলাতে হলে তখন বিকল্প নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হয় না।’
কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ আর অচেনা কন্ডিশনে বিশ্বসেরাদের মুখোমুখি হওয়ার সুবিধা কিংবা ঝুঁকি যে সমান হয় না, সে ভাবনাও নিশ্চয়ই আছে নির্বাচকদের!